দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গায় হাতছানি দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা। তাই চুয়াডাঙ্গার খেজুর গাছিরা গাছ কেটে প্রস্তুতি করা শুরু করেছে। গাছ প্রস্তুত করে রস সংগ্রহ করার পর তৈরি হবে গুড়। এসব গুড় যাবে এই জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়। একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে অপরদিকে উন্নতমানের ভেজালমুক্ত গুড়ে চুয়াডাঙ্গার সুখ্যাতি ছড়াবে দেশজুড়ে।

চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ভোর ৫ টার পর থেকেই গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করার জন্য ধারালো লোহার অস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। মাঠের চারপাশজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করার জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয় তাদের। আর কিছুদিন পর গাছে মাটির হাড়ি বাধিয়ে দেয়া হবে। তারপর শীতের মধ্যে গাছ থেকে রসের হাড়ি নামাবেন তারা। এরপর মাঠের মাঝখানে আগুনের তাপে জ্বালানো হবে রস। সেই রস থেকে উৎপাদন হবে উন্নতমানের ভেজালমুক্ত গুড় ও পাটালি। গুড়-পাটালি এই জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মিটাবে। আবার চুয়াডাঙ্গার আছে নিজস্ব খেজুর গুড়ের সব থেকে বড় হাট। সরোজগঞ্জ বাজারের এই হাটে সকাল হলে চাষি আর ব্যবসায়িদের আনাগোনায় ভরে ওঠে।

জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৫০টা করে খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। যা থেকে কৃষকদের দৈনিক হাজিরা হচ্ছে ৫০০-৭০০ টাকা। এবার এই জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেজুর গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। জেলায় মোট খেজুর গাছের সংখ্যা ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৬০ টি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের এক গাছি তারিক রহমান বলেন, এখন মাঠের সবকটি গাছ প্রস্তুত করছে গাছিরা। কারণ শীত আসি আসি করছে। গাছ কাটা শেষ হলে রস সংগ্রহ করা হবে। এরপর তৈরি হবে গুড়। টানা তিন মাসের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলবে।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আরেক গাছি তুহিন আলী বলেন, এখন সকাল ও সন্ধ্যা শীত লাগছে। আর বেশিদিন নেই। তাই এখন মাঠের প্রত্যেকটা খেজুর গাছ কেটে পরিচর্যা করা হচ্ছে। এরপর রস সংগ্রহ করা হবে। তারপর রস জ্বালিয়ে গুড় উৎপাদন করা হবে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৫০ টা করে খেজুর গাছ কাটছি। যা থেকে দৈনিক হাজিরা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। আর কিছুদিন পর গাছ কাটা শেষ হয়ে যাবে। তারপর গুড় তৈরির কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, এই সময়ে গাছ পরিচর্যায় কাজ চলছে। এরপর রস সংগ্রহ, তারপর গুড় তৈরি। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় চুয়াডাঙ্গার বিখ্যাত খেজুরের গুড়। এবারও সেই লক্ষ্যে গুড় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। শীত মৌসুমজুড়ে গাছিদের যে বিশাল কার্যক্রম এবং তা থেকে আর্থিক খোরাক জোগাড়ের বিষয়টি আরও সুদৃঢ় করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এজন্য তাদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শাকিল/সাএ