চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী ‘বাউত উৎসবে’ মেতেছেন শৌখিন মাছ শিকারিরা। অনেকে ‘পলো উৎসব’ নামেও চেনেন কুয়াশা ঢাকা ভোরের হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা। হেমন্তের কাকডাকা ভোরে পলো, বেসাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে।
শনিবার (২ নভেম্বর) ভোরে চলনবিলে ছুটে আসছেন দূরদূরান্তের শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। লোকজ রীতিতে হৈহুলোরে বিলের জলে মনের আনন্দে চলছে মাছ শিকার।
সরজমিনে দেখা যায়, চলনবিলে এ উৎসবে ১১টি বাস গাড়ি, ৭ টি ট্রাক ও ৪ টি পিকআপ গাড়িতে চেপে এসে প্রায় ১৫শ মাছ শিকারি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একসঙ্গে মৎস্য শিকার করছেন। তাদের হাতে ছিল পলো, চাক পলো, নেট পলো, ঠেলা জাল, বাদাই জাল, লাঠি জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম। বিলপাড়ে সমবেত হওয়ার পর একসঙ্গে বিলে নেমে মাছ ধরার আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ। শৌখিন মাছ শিকারিরা একত্রিত হয়ে সারিবদ্ধভাবে বিলে পলো, ঠেলাজাল, বেড়াজাল দিয়ে মাছ শিকার করেন। এসময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ শোল, বোয়াল, গজার, রুই, কাতলা, চিতল, পুঁটি, খৈলসা, শিং, টেংরা, পাবদা মাছ ধরা পড়ে। দুপুরের দিকে মনে বেশ আনন্দ নিয়ে গন্তব্যস্থানে ফিরে যান শিকারিরা।
চলনবিলে মাছ ধরতে আসা বাউত উৎসবের মৎস্য শিকারি গাইবান্ধা পলাশবাড়ী এলাকার শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি প্রায় ৮বছর ধরে মৎস্য শিকার করি প্রতি বছর শখের বসে মাছ শিকারের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় আসি। এখানে অনেক আনন্দ হয়। মাছ কেউ পাই আর নাই বাউতের একটা উৎসব হয়। এজন্যই আমরা আসি।
পলাশবাড়ী বাসুদেবপুর এলাকার সাহেব মিয়া তিনিও ছোট বড় কয়েকটি মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার এক হাতে ছিল পলো আর এক হাতে শিকার করা মাছ।
পবনাপুর এলাকার আব্দুল কাদের বলেন, বহু পুরনোকাল থেকে হবিগঞ্জের হাওরগুলোতে মাছ শিকারের জন্য পলোর ব্যবহার হয়ে আসছে তাই আমরা আজ চলনবিলে মাছ শিকার করতে এসেছি।
জানা যায়, নাটোরের সিংড়া চলনবিলে, সালুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, বনারপাড়া এলাকার প্রায় ১৫শ জন মৎস্য শিকারি এসেছে চলনবিলে।
চলনবিল পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ফরামের সভাপতি এস.এম রাজু আহমেদ জানান, দল বেঁধে মাছ ধরার এ আয়োজনে মৎস্য শিকারিদের ডাকা হয় বাউত। তাদের ঘিরেই উৎসবের নামকরণ। ভোরের আলো ফুটতেই বিলাঞ্চলে দলবেঁধে মাছ শিকারে নামেন বাউতের।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর