চট্টগ্রামের আনোয়ারায় রাঙাদিয়া উত্তর বন্দর ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন বন্ধের অপচেষ্টার প্রতিবাদে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেড (সিইউএফএল), ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেড (ডিএপিসিএল) ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেড (কাফকো) সার কারখানায় ধর্মঘট পালন করছেন শ্রমিকরা।
ফলে শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাত ৯টা থেকে সারাদেশে ডিলারদের মাঝে ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়া উত্তর বন্দর ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ নির্বাচন আগামী ৩ নভেম্বর হওয়ার নির্ধারিত সিডিউল ছিল। গত ১ মাস ধরে নিবার্চনকে ঘিরে শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা শুরু হয়। এরই মাঝে সাধারণ সম্পাদক পদে নজরুল ইসলাম বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অন্যান্য প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় থাকলেও নির্বাচন বন্ধ করতে বিশেষ চাপ শুরু করে একটি মহল। এতে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হন। এর আগে গত বুধবার শ্রমিকরা নির্বাচন বন্ধের অপচেষ্টার প্রতিবাদে সিইউএফএল জেটি এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এবং ওইদিন ৬ ঘণ্টা সার সরবরাহ বন্ধ রাখেন।
শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান। তিনি জানান, শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচন ঘিরে সমস্যার কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ধর্মঘট পালন করছে ঠিকাদার-শ্রমিক সংগঠনের শ্রমিকরা। ফলে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে সিইউএফএলের সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন দেশের ৩৪টি ডিপোতে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেড (সিইউএফএল) থেকে ৭০০ টন, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেড (ডিএপিসিএল) থেকে ৩০০টন ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেড (কাফকো) থেকে ২ হাজার ২০০ টন ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া সার সরবরাহ করা হয়। এসব সার দেশের প্রতিটি জেলার ৫ হাজার ৫০০ ডিলারের মাধ্যমে প্রান্তিক চাষীদের কাছে পৌঁছায়।
রাঙ্গাদিয়া উত্তর বন্দর ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত প্রায় ৩২০ জন শ্রমিক রয়েছেন। এ শ্রমিকরা সিইউএফএল, ডিএপিসিএল ও কাফকোর উৎপাদিত ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া সার সরবরাহের কাজ করে থাকেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত রাঙ্গাদিয়া উত্তর বন্দর ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বিগত ৯ বছরের বেশি সময় ধরে শ্রমিক সংগঠনের এই নির্বাচন বন্ধ ছিল। এ ব্যাপারে সংগঠনের সাধারণ সভায় আগামী রবিবার ৩ নভেম্বর নির্বাচনের পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা ছিল। ইতিমধ্যে প্রচার–প্রচারণাসহ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলেও একটি কুচক্রী মহল সাধারণ শ্রমিকদের নির্বাচন বন্ধের হুমকি–ধমকি দিতে শুরু করে। আমাদের অফিসে হামলা করে ও পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। এই ঘটনায় প্রশাসনিক সহযোগিতা না পেয়ে সাধারণ শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত। তাছাড়া শ্রম বিভাগও নানা টালবাহানা শুরু করে। এই অবস্থায় নির্বাচনী অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সাধারণ শ্রমিকেরা সার সরবরাহ বন্ধ রেখে গত দুই দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছেন। যতদিন নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হয় ততদিন সার সরবরাহ কাজ বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রামসহ আশপাশের ৮ জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন ডিলাররা। তারা বলছেন, এভাবে সার সরবরাহ বন্ধ থাকলে কৃষিকাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর