ঘরের কোনো বা চুপিসারে জুয়া খেলার যুগের পরিবর্তন হয়ে ডিজিটাল জুয়ার যুগে প্রবেশ করেছে। আগে জুয়া খেলা হত নির্দিষ্ট কোনো স্থানে। এখন চায়ের দোকান, খেলার মাঠ, রাস্তার মোড়, বাস-মিনিবাস, ট্রাক, রিক্সা-ভ্যান, ফসলের মাঠ, গ্রামের মেঠোপথ, গাছের ছায়াযুক্ত স্থান, হাট-বাজারসহ সর্বত্রই চলছে ডিজিটাল জুয়া। নির্দিষ্ট স্থানের জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে হাতে হাতে।
সকলের হাতে স্মার্টফোন থাকায় এ জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে ছাত্র-যুবক, বয়স্কসহ কর্মজীবী, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষসহ সব বয়সের মানুষ। এ ডিজিটাল জুয়ায় আসক্ত হয়ে কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে আবার কেউবা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে ভিসা প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পাঁ দিয়ে অনেক প্রবাসীরাও হচ্ছে নিঃস্ব। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে এসব ডিজিটাল জুয়া (থাইগেম) ও ভিসা প্রতারণা চক্রের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। এ চক্রের প্রতারকরা প্রবাসীদের ঠকানো টাকায় মোটা তাজা হয়ে উঠছে। ফেসবুকে ভিডিও বুস্ট করে ইমু নম্বর দিয়ে কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে হচ্ছে অর্থবান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারক চক্র ডলার দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশের ইমু নম্বর কিনে মোবাইলে সেট আপ দেয়। তারা ফেসবুকের ভিডিওতে কোটি টাকার থাই গেমের বিজয়ী নম্বর ও ইউরোপ কান্ট্রির ভিসা দেয়ার নানা রকম প্রলোভন দেখায়। প্রবাসীরা সেই ইমোতে যুক্ত হলে প্রতারকরা কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারকদের খপ্পরে পরে প্রবাসীরা পরিশ্রমের টাকা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জে প্রথমের দিকে নিতাই ইউনিয়নের ছলিমের বাজারে ডিজিটাল জুয়া (থাই গেম) ও ভিসা প্রতারক চক্রটি গড়ে উঠে। স্বল্পশিক্ষিত নি¤œ আয়ের বখাটে যুবকরা এ চক্রের সদস্য। তাদের রয়েছে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা দামের মোটরবাইক, ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা দামের স্মার্টফোন, ২ লক্ষ টাকা দামের ল্যাপটপ ও নির্মাণ করেছে বহুতল রাজকীয় বাড়ি। এ চক্রটি গত তিন বছরে উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে । তাদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। সম্প্রতি উপজেলার নিতাই ছলিমের বাজারের শরীফ, ছালাম, তাছমুন, কুসুম, ফারুক, চাঁদখানা নগরবন গ্রামের নিশাত, কাকনসহ কতিপয় প্রতারক উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণার জাল বিস্তৃত করেছে। বিশেষ করে নিতাই ও বাহাগিলীতে এদের দৌরাত্ম্য বেশি। ডিজিটাল জুয়া (থাইগেম জুয়া) ও ভিসা প্রতারক চক্রের সদস্যরা সহজ সরল মানুষ ও প্রবাসীদের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানান- প্রবাসীরা ভিডিও দেখে থাই গেমের গোপন নম্বর ও আকামার জন্য ইমোতে যুক্ত হন। থাই সরকারের লটারি কার্যালয়ে ও ভিসার ক্ষেত্রে ইউরোপে চাকরির কথা জানানো হয়। টাকার বিনিময়ে থাইগেমে রেম্বল, ডাউন নম্বর অথবা ভিসার ক্ষেত্রে আবেদন ফরম নেন। পরে তাদের ছবি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও কাগজপত্র নিয়ে গেম উইন অথবা ভিসা পাওয়ার কথা জানানো হয়। বড় স্যার, ভ্যাটের খরচ, ডলার কনভার্ট, ভিসার ক্ষেত্রে বিমান ভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র দেখিয়ে একাধিকবার লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়। গেম ড্র হওয়া ও ভিসা দেয়ার তারিখের আগে তাদের ইমুতে ব্লক করে দেয়া হয়।
জানা যায়, প্রবাসীদের ফেসবুক ভিডিওতে কোটি টাকার থাই গেমের উইন নম্বর ও ইউরোপের ভিসা দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। পরে সেই ইমোতে যুক্ত হলে প্রতারকরা কৌশলে তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়। এতে প্রবাসীসহ তাদের পরিবারও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ডিজিটাল জুয়া (থাই গেম) ও ভিসা প্রতারক চক্রের সদস্যদের চাল চলনে স্থানীয় সাধারণরা হতবাক হচ্ছে। এদের কর্মকাণ্ডে পুলিশ প্রশাসনেরও নজরদারী বেড়েছে ব্যাপক। ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কেউ কেউ গাঁ ঢাকা দিয়েছে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি গ্রাম থেকে শামসুজ্জামান (২৭), মোরসালিন ইসলাম (১৮), রাকিব শাহ্ ও হাসু ইসলামকে ডিজিটাল জুয়া ও ভিসা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে নিতাই ছলিমের বাজারে ভিসা প্রতারণার ঘটনায় ডিবি পুলিশ রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করলে চক্রের সদস্যরা একজোট হয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ১১৮ জনের নামে মামলা করে ডিবি পুলিশ।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি (প্রশাসন) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল জুয়া (থাই গেম) ও ভিসা প্রতারণার ঘটনায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মোবাইলের ডিভাইসগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসলে আমরা চার্জশিট কোর্টে পাঠাবো। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার ৪ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ডিজিটাল জুয়া (থাইগেম) ও ভিসা প্রতারকদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবেও বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর