ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ মধ্যরাতে। এতে বিগত ২২ দিন কর্মহীন থাকা ভোলার ৭ উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক জেলে এরই মধ্যে জাল-ট্রলার ও ট্রলারের ইঞ্জিন মেরামত শেষ করে মাছ ধরার সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন আবার মাছ ধরে বিগত দিনের ধারদেনা পরিশোধের আশা তাদের।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে গত ১২ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় যা চলবে আজ ৩ নভেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত। এই ২২ দিন ধরেই অপেক্ষার প্রহর শুনছেন ভোলার জেলেরা।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে গত ২১ দিনে ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ৬০৫টি অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪ শতাধিক অসাধু জেলেকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে সাড়ে ৩০০ এর বেশি জেলেকে ১২৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমান করা হয়েছে। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বাকি জেলেদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে জব্দকৃত ১৯ লাখ ৬০ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে।
ভোলায় মোট প্রায় ২ লাখ জেলের মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধিত হলেন ১ লাখ ৬৮ হাজার জন। অনিবন্ধিত জেলে আছেন ৩০ হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে সরকারি প্রণোদনার ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯০০ জন জেলে। বাকিরা সরকারি প্রণোদনা না পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে চরম দুর্ভোগে দিন পার করেছেন তারা।
সরেজমিনে ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীর তীরবর্তী জেলে অধ্যুষিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা মাছ ধরার ট্রলার জাল ও ট্রলারের ইঞ্জিন মেরামত করে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। এছাড়া অনেকে ডাঙা থেকে তাদের ট্রলার নদীতীরে নামাতে শুরু করেছেন। আবার অনেকেই ট্রলারে জাল তুলছেন। অন্যদিকে আড়তদাররাও আড়ত চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মেঘনা নদীর জাহাঙ্গির মাঝি বলেন, আমি সরকারের ২২ দিনের অভিযান দিছে, মানছি। এ সময়ে বাল-বাচ্চা (ছেলে-মেয়ে) লইয়া অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। আজ অভিযান শেষ হবে। আমরা গাঙ্গে যাইয়া মাছ ধরুমু (ধরবো)।
শেখ ফরিদ মাঝি ও ছিডু মাঝি বলেন, আজ রাত ১২টার পর গাঙ্গে যামু , মাছ ধরতে। তাই জাল-ট্রলার রেডি করতাছি।
নাছির মাঝি ঘাটের আলমগীর মাঝি বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে ট্রলারের ইঞ্জিন ও জাল তরে (তীরে) উঠায়া রাখছি। আজকে আবার নামাইছি। নদীতে যাওয়ার জন্য আমার ট্রলারের মাঝি-মাল্লা সবই রেডি আছে।
ইলিয়াস মাঝি বলেন আশা করি অভিযানের পর নদীতে গিয়ে ভালো মাছ পামু। এ আশা নিয়েই অভিযান অমান্য করে নদীতে নামিনি।
জেলে মো. শামছুল বলেন, সরকার অভিযানের মধ্যে আমাগরে (আমাদের) ২৫ কেজি কইরা চাল দিছে। সেই চাল খেয়েও ৮ হাজার টাকা দেনা করছি। নদীতে গেলে আল্লাহ যদি ভালো মাছ দেয় তাইলে বিগত দিনের দেনা দিমু।
জেলে মো: জুলাশ বলেন বিগত দিনে আমরা অভিযানের পর নদীতে গিয়ে ভালো মাছ পাইছি। ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার মাছও পাইছি। এবার অভিযান শেষে নদীতে গেলে কী পরিমাণে মাছ পাই তা আল্লাহই ভালো জানেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান. আজ মধ্যরাত থেকে জেলেরা নদীতে মাছ ধরার জন্য নামবেন। নদীতে এ বছর পানির চাপ বেশি এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। আশা করছি জেলেরা নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামলে প্রচুর মাছ পাবেন এবং তাদের বিগত দিনের ধারদেনাও শোধ করতে পারবেন। জেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও জেলেদের সহযোগিতায় আমরা অভিযান সফল করতে পেরেছি
এছাড়া নিবন্ধিত জেলেদের ২৫ কেজি করে চাল অভিযানের প্রথম সপ্তাহেই দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোলায় ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার টন, যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিকে এ বছরেও ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী জেলা মৎস্য বিভাগ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর