গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। সে সাথে আত্মগোপনে রয়েছে জেলা পরিষদের সকল সদস্য। এতে জেলা পরিষদের কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। চেয়ারম্যান নেই- এই অজুহাতে ভাটা পড়েছে পরিষদের সকল উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডে। সে সাথে পরিষদে হস্তান্তরিত ৩১টি দপ্তরে সরকার পতনের পরবর্তী প্রেক্ষাপটের দোহাই দিয়ে চলছে অফিস ফাঁকির হিড়িক।
এদিকে সরকার পতনের ৩ মাস পার হলেও এখনো নতুন চেয়ারম্যান ও সদস্য দিয়ে পরিষদ গঠন করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পদত্যাগও করেননি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এমনকি অপসারণও করা হয় নি চেয়ারম্যান ও সদস্যদেরকে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ৩১টি হস্তান্তরিত বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য, জনস্বার্থ প্রকৌশল, সমাজ সেবা, সমবায়, প্রাণী সম্পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও রয়েছে। বর্তমানে চেয়ারম্যান বিহীন পরিষদ হওয়ায় ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে এসব দপ্তরের কার্যক্রম।
খাগড়াছড়ি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. রাজু আহমেদ বলেন, 'আমি গত আগস্ট মাসেই খাগড়াছড়িতে যোগদান করেছি। চেয়ারম্যান না থাকায় এখনো যোগদান পত্র হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলন, দাপ্তরিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে ন্যস্ত বিভাগগুলো এক প্রকার স্থবির হয়ে আছে। দ্রুত পরিষদ গঠন করে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ হওয়া প্রয়োজন।'
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর খাগড়াছড়িসহ দ্রুত তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন অন্তর্বর্তী পরিষদ গঠন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। এ নিয়ে অনেকে চেয়ারম্যান ও সদস্যপদ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপও করেছেন। অনেকে এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন তদবির। এক্ষেত্রে অযোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা চেয়ারম্যান এবং সদস্য দিয়ে পরিষদ গঠন হলে দেখা দিতে পারে শঙ্কা। সৎ এবং পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারীদের পরিষদের দায়িত্বে দেখতে চান সাধারণ নাগরিকরা।
খাগড়াছড়ির সচেতন নাগরিক আব্দুল হাই, সুশান্ত চাকমা এবং অলেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, 'আমরা আশা করি অতীতের চেয়ে ভাল পরিষদ পাব। যে পরিষদের সদস্যরা কোন দূর্নীতি, অনিয়ম করবেনা। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি এবং ঘুষ বানিজ্য করবেনা। জনবান্ধন উন্নয়নমুখী পরিষদই কাম্য। অন্যথায় হিতে বিপরীতও হতে পারে।'
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এ পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে পরিষদে এক প্রকার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থবির হয়ে আছে পরিষদে ন্যস্ত সবগুলো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। পরিষদের সকল কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনতে দ্রুত চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।'
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুমন চৌধুরী বলেন, 'পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমাদের অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। সীমিত পরিসরে প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদে ন্যস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'কিছু নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। যেগুলো চেয়ারম্যান ছাড়া আর কেউ করতে পারবেনা। যেমন ভূমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জেলা পরিষদ সুন্দরভাবে চলার জন্য পরিষদ গঠন খুবই জরুরী।'
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকি বলেন, 'আমরা জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের বিষয়ে কাজ করছি। বিগত পরিষদকে বাতিল করে নতুন পরিষদ গঠন করা হবে। যদিও এখন সাময়িক কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে তবে শীঘ্রই তা নিরসন হবে।'
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর