মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সামনে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক ও অফিস সহায়ক তোফাজ্জেল হোসেনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে যুবদলের ৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার দিনগত রাতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক বাদী হয়ে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন গ্রুপের ৮ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে গাংনী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে শিক্ষা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্যোগে মানববন্ধন থেকে লাঞ্ছিতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মামলার আসামীরা হলেন, যুবদল কর্মী গাংনী পৌরসভার শিশির পাড়া গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে বসির (৩৫) ,আব্দুর রশিদের ছেলে গাফার আলী(৩৭), আব্দুল মালেকের ছেলে ঈমান আলী, আব্দুল ওয়াহেদের ছেলে জনি (৩৬), নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন (৩৫), মহাশিন আলীর ছেলে ইয়ামিন আলী(৩৭), আব্দুল ওয়াদু এর ছেলে সাইদুল ইসলাম(৩৭) ও মোরশেদ আলীর ছেলে চান্দু ( ৩৬)। আসামীরা জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের সদস্য বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে, গাংনী উপজেলা বিএনপি তিনভাবে বিভক্ত এক গ্রুপে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, অপর দুটি পক্ষে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপি সিনিয়র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন ও গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু।
সম্প্রতি গাংনী শহর সহ বিভিন্ন এলাকায় জেলা বিএনপি সিনিয়র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের কতিপয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৈরাজ্য সৃষ্টি ভাঙচুর চাঁদাবাজি সহ নানা অভিযোগ উঠেছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সূত্র থেকে জানা গেছে। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপি সিনিয়র সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল বলেন, শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হননি। তবে গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারক জানান, আদালতে দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ (বিচারক) তহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পিটিশন নং-১০৮/২০২৪ মামলার নিষ্পত্তি করত আদেশ দেয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ,২০০০ এর ২৭ (১ক) ধারা অনুযায়ী এই আদেশ ৭ কর্মদিবসের মধ্যে একটি লিখিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন এবং উক্ত প্রতিবেদনের সমর্থন সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের কাগজ পত্র সহ প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রমাণ দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়। সে মোতাবেক গেল সোমবার বিকেলে বাদী ও বিবাদীদের শুনানিতে আহ্বান করা হয়। মামলার বাদী সীমা খাতুন ও বিবাদী তুহিন আলীকে নিয়ে উভয়পক্ষের স্বাক্ষীদের নিয়ে শুনানি করছিলেন। এমতাবস্থায় একদল দুর্বৃত্ত শিক্ষা অফিসের সামনে বিশৃঙ্খলা শুরু করে। এসময় শিক্ষা অফিসের অফিস সহায়ক তোফাজ্জেল হোসেন তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানালে বাদীপক্ষের লোকজনের উপর চড়াও হয় এবং কিলঘুষি মারতে থাকে। বাইরে হট্টগোল ও গালিগালাজ শুনতে পেয়ে আমি অফিসের গেটের সামনে আসলে একদল উচ্ছৃঙ্খল দুর্বৃত্ত আমার উপর চড়াও হয় এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় গালিগালাজ করার পর শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া করে লাঞ্ছিত করে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে মোবারককে মারধরের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর তা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করি। পরবর্তীতে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কঠোর ভূমিকা রাখেন জেলা প্রশাসক। তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গাংনী উপজেলার হাড়িয়াদহ গ্রামের সোহরাব আলীর মেয়ে সীমা খাতুনের সাথে একই উপজলার ঝোড়পাড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে তুহিন আলীর প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ১ বছর আগে নিকাহ রেজিষ্টারের কার্যালয়ে বিয়ে হয় বলে দাবি করা হয়। পরবর্তীতে তুহিন আলী বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে স্ত্রী সীমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে সীমা খাতুন আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ইতঃপূর্বে গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। মামলা নিষ্পত্তি করতে তিনি স্বামী তুহিনের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। বাদী সীমা খাতুন নারাজি দিলে পরবর্তীতে উক্ত মামলা পুনঃ প্রতিবেদন করে নিষ্পত্তি করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেই আলোকে তিনি উভয়পক্ষের শুনানি করছিলেন।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর