• ঢাকা
  • ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • শেষ আপডেট ৩ মিনিট পূর্বে
এম. সুরুজ্জামান
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০:৪২ রাত
bd24live style=

বাবাকে মেরেছে বন্যহাতি, বন্যহাতি হত্যা মামলায় জেল হাজতে ছেলে

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় সম্প্রতি একটি বন্যহাতি হত্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়ে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৪০) নামের নিরীহ এক ভ্যানচালককে বন বিভাগের লোকজন জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের লোকজন। 

পরিবারের সদস্যরা জানান ভুক্তভোগী শহিদুলের বাবা ছোরহাব আলীকেও বিগত ২০০৮ সালে একদল বন্যহাতি শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছার মেরে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। শুধু শহিদুল ইসলাম নন এলাকার আরো ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো অনেক দরিদ্র অসহায় নিরীহ মানুষকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলার ভয়ে গ্রামের কৃষকরা বাড়ি ঘরে থাকছেন না। আর এই সুযোগে বিনা বাঁধায় কৃষকের সোনার ফসল খেয়ে শেষ করছে বন্যহাতির পাল।

সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামের কৃষকরা গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে বন্যহাতির কবল থেকে তাদের চলমান আমন ফসল রক্ষা করতে জেনারেটরের সাহায্যে আলো জ্বালিয়ে রাখেন। এসময় বন্যহাতির দল তাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কৃষকের ধান ক্ষেতে আসতে চাইলে স্থাপিত ওই জেনারেটরের তারে জড়িয়ে একটি মাদি বন্যহাতির মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা ওইদিন রাতেই বাতকুচি গ্রামের শহিদুল ইসলাম নামে এক ভ্যানচালককে আটক করে ও তারসহ জেনারেটরটি জব্দ করে। পরদিন মৃত বন্যহাতিটির ময়নাতদন্তের পর মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এই ঘটনায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা শহিদুল ইসলামসহ ১১ জনের নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত রবিবার (২ নভেম্বর) রাতে একই গ্রামের আরেক আসামি মোহাম্মদ আলীর পুত্র ইব্রাহিম মিয়াকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। এই ঘটনায় বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

কারাবন্দি শহিদুলের স্ত্রী জামেলা খাতুন বলেন, আমার স্বামী নির্দোষ। ঘটনার দিন তিনি বাড়ির পাশে হাতি তাড়ানো দেখতে গিয়েছেন। এসময় গ্রামের মানুষ ও রেঞ্জ কর্মকর্তার অনুরোধে ভাড়ার বিনিময়ে তার ভ্যানগাড়ি দিয়ে জব্দকৃত জেনারেটর ও জিআই তার মধুটিলা রেঞ্জ অফিসে পৌঁছে দিতে গেলে আটক করা হয়। আমার স্বামীকে কারাগারে পাঠানোতে আমাদের পরিবারের কোন রোজগারের লোক নেই। এখন আমরা পরিবারের ৪ জন সদস্য খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছি। আমরা সমিতি থেকে ঋণ করে ভ্যানগাড়িটি কিনেছিলাম। এই ঋণের কিস্তির টাকা দিতে পারছি না। তাই আমার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, একদিকে প্রতিদিন কৃষকের আধাপাকা সোনার ফসল খেয়ে সাবাড় করছে বন্যহাতির পাল। অপরদিকে, পুলিশি অভিযানে গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে দিয়েছেন এলাকার মানুষ। যদি গ্রামের লোকজন বাড়িতে থাকতেন তাহলে খড়কুটার আগুন, মশাল জ্বালিয়ে ও ডাক চিৎকার করে তাদের সোনার ফসল বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু মামলার ভয়ে কৃষক বাড়িতে না থাকায় বিনা প্রতিরোধে বন্যহাতির দল এখন দিনেরাতে আধাপাকা ধান খেয়ে সাবাড় করে দিচ্ছে। এসব বন্যহাতিকে কোনোক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে না। এ যেন এলাকার আরেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় কোনো কোনো গ্রামে আধাপাকা ধানই কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। এসব নানা বিষয় নিয়ে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ মনঃক্ষুণ্ন হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন মানুষ আগে, নাকি হাতি আগে। বন্যহাতির দাম বেশি নাকি মানুষের দাম বেশি ?। একইসাথে তারা সরকারের কাছে ওই বন্যহাতি হত্যা মামলা প্রত্যাহার ও বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধের স্থায়ী সমাধানও চেয়েছেন।

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আরো জানান, পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘ দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে একদল বন্যহাতি তাণ্ডব চালিয়ে এলাকার বসবাসরত মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। বিগত ২০০৮ সালে উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি টিলাপাড়া গ্রামের কৃষক ছোরহাব আলী ও চলতি বছর একই গ্রামের কৃষক উমর আলীকে বন্যহাতির দল শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ও পা দিয়ে পিষে নিহত করে। নিহত ওই দুই পরিবার এখনো কোন প্রকার ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি।

উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ও বাতকুচি গ্রামের কৃষক আবদুল কাদির বলেন, এ বছর পাহাড়ি ঢলে আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। আরেকদিকে বন্যহাতি ও আধাপাকা ধান খেয়ে শেষ করে চলেছে। আবার সরকারিভাবে হাতিকে উত্ত্যক্ত করতেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এখন আমরা কোন দিকে যাবো। যদি ফসল ঘরে তুলতে না পারি তাহলে আমাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

বাতকুচি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক উমর আলী ও কৃষানি নুরেদা বেগম বলেন, এ বছর আবাদ অনেক সুন্দর হয়েছিল। কিন্তু বন্যহাতি আমাদের প্রায় পাকা ধান খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। বন্যহাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় বিষয়টি আপনি জানেন কি ? এম প্রশ্নে তারা বলেন, কিছুসংখ্যক কৃষক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তবে তারা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ পেতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি দীর্ঘদিন সময় লেগে যায়। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকার মানুষের খ’ তফসিলভুক্ত জমি বেশি। রেকর্ডিং জমির ক্ষতিপূরণ যৌক্তিক সময় পাওয়া গেলেও খ’ তফসিলভুক্ত বেশিরভাগ জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ব্যাপারে আরো শর্ত শিথিল করার দাবি জানাই।

ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যহাতির অত্যাচারের শুরুর দিকে কৃষকরা কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ পেতেন না। বর্তমানে বন্যহাতি দ্বারা নিহতের পরিবার সরকারিভাবে ৩ লাখ, আহত ব্যক্তি ১ লাখ ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। একইসাথে বন্যহাতি ও মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব নিরসনে সতর্ক থাকতে এলাকায় মাইকিং করাসহ নানা ধরনের প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, বন্যহাতি দ্বারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো জানান, যেহেতু কৃষকদেরকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে তাই আইন হাতে তুলে নিয়ে কোনোক্রমেই বন্যহাতিকে উত্ত্যক্ত বা হত্যা করা যাবে না। তাছাড়া বন্যহাতি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়ে চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অবগত করবো।

শাকিল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com