যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে শেষ পর্যন্ত রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ১৩২ বছরের এক রেকর্ড ভাঙলেন ট্রাম্প। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের ল্যান্ডমার্ক পার করে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলাকে পরিষ্কার ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়ে গেছে তার দল রিপাবলিকান পার্টির। দারুণ এ জয়ে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে উঠেছে রিপাবলিকান শিবির।
অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্পকে ভালোই টক্কর দিচ্ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা। বড় স্টেটগুলোতে জিতে হোয়াইট হাউস পুনরুদ্ধারের দৌড়ে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্টের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিলেন ডেমোক্র্যাটদের নারী কাণ্ডারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুইং স্টেটের ফলাফলই কমলাকে ছিটকে দিলো দৌড় থেকে। নর্থ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়া জয়ের পর মিশিগান এবং উইসকনসিনেরও ইলেকটোরাল ভোট ঝুলিতে পুরে জয় নিশ্চিত করলেন ট্রাম্প।
বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবছর মোটামুটি ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এই রপ্তানির বেশির ভাগই তৈরি পোশাক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হিস্যার ৯ শতাংশ দখলে নিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে চীন আর ভিয়েতনাম।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি যদি তাঁর ট্যারিফ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন, তবে তা বাংলাদেশের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। তবে তিনি যদি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ না করেন, তাহলেই কেবল সুবিধা হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে। সুতরাং ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে তা বাংলাদেশের রপ্তানিকে প্রভাবিত করবে না। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ট্রাম্প যদি শাস্তিমূলক কোনো শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে তা দুশ্চিন্তার বিষয় হবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ব্যাপারে তাঁর মনোভাবের কথা তিনি প্রকাশ করেছেন।
চীনের ওপর প্রস্তাবিত ট্যারিফের প্রসঙ্গে এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য–বিশেষজ্ঞ বলেন, চীন বিশ্বের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক দেশ। ট্রাম্প যদি তাঁর কথামতো চীনের ওপর বড় হারে শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে তা বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশের জন্য সুযোগ বয়ে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বিশাল বাজার ধরতে পারবে এসব দেশ। কারণ, এসব দেশকে তুলনামূলক কম শুল্ক দিতে হবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প যদি তাঁর বিশেষ কোনো বন্ধুরাষ্ট্রকে আবার শুল্ক সুবিধা দেন, তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি যেকোনো দিকেই যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটার দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।’
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর