সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় বাৎসরিক ঘুষ দিয়ে দেদারসে চলছে বরফকল। কাগজ-কলমে বৈধতা না থাকলেও পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় ৫টি বরফকল চলছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পল্লী বিদ্যুতের অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর ৫ ধারার (১) ও (৪) উপধারার ধারার ক্ষমতাবলে সংরক্ষিত এ এলাকাকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এক রিট আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন শিল্পকারখানা অনুমোদন ও পুরাতন শিল্পকারখানা এগুলোর অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্ত দেয় হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ওই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কতগুলো শিল্পকারখানা রয়েছে, তার তালিকা ছয় মাসের মধ্যে জমা দিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় আদালত।
নির্দেশনার কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবন সংলগ্ন ইসিএ এলাকায় সর্বমোট ১৯০টি অবৈধ শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে শ্যামনগরেই আছে ২০টি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও লাল শ্রেণির ২৪টি ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বরফকল থাকলেও শ্যামনগর উপজেলায় ইসি এলাকায় ৫টি বরফকল চলছে বহাল তবিয়তে।
এগুলো হলো, শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের ন'বেকী বাজারে নদীর তীরে অবস্থিত মেসার্স আল্লাহ মালিক আইচ প্লান্ট, গাবুরা ইউনিয়নের চৌদ্দরশি এলাকার মাঈনুল ইসলাম বরফকল, আল্লাহ মালিক আইচ প্লান্ট উত্তর কদমতলা, ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের বংশিপুর আল আমিন আইচ প্লান্ট ও মোঃ শাহিনুর হক বরফকল। এসমস্ত বরফকল গুলো ৫ থেকে ৯ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত।
শ্যামনগরে অবৈধ শিল্পকারখানার মধ্যে রয়েছে, ইটভাটা,রেস্তোরাঁ, রাইস মিল, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, করাতকল, মৎস্য খামার, কাঁকড়া চাষ ও হ্যাঁ চারি। এই তালিকায় শুধু শ্যামনগরেই আছে শতাধিক কারখানা। যেগুলো পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলা মেসার্স আল্লাহ মালিক আইচ প্লান্টের স্বত্বাধিকারী মোঃ শাহিনুর হক বলেন, আমার ৩টি বরফ কল আছে, তার মধ্যে ন'বেকি বরফকলের পরিবেশের ছাড়পত্র আছে বাকি দুইটার নেই। আমি এমন বেশি খোঁজা রাখি না, হাফিজুর এবিষয়টা দেখাশোনা করে।
হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের ন'বেকী ছাড়া কোনো বরফকলের পরিবেশের ছাড়পত্র নেই।
বংশিপুর সাব্বির, শাহিন ভাই ও গ্যারেজ বাজারের টার কোনো ছাড়পত্র নেই। তাহলে কিভাবে চালান এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা যখন করছি তখন পরিবেশের ছাড়পত্রের প্রয়োজন ছিল না। গ্যারেজ বাজারেরটা ১ থেকে দেড় বছর আগে করেছেন এটা কিভাবে সম্ভব হল এমন প্রশ্ন উত্তরে তিনি বলেন, আমরা জানতাম না। আমাদের কেউ বাঁধা দেয় নি। যদি বরফ কল ধরেন তাহলে ইসি এলাকায় ৩৫০/৪০০ শিল্প কারখানা আছে যেগুলো সবই অবৈধ।
আল আমিন আইচ প্লান্টের স্বত্বাধিকারী মোঃ সাব্বির হোসেনের আইন অমান্য করে কিভাবে বরফকল চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলোতো ফোনে হয়না, আপনি শ্যামনগরে আসেন চায়ের দাওয়াত থাকলো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় আমরা নতুন করে কোন ছাড়পত্র দিচ্ছি না। যেগুলো আগে থেকেই আছে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সুন্দরবন সুন্দরবন উপকূলের জেলেদের কথা মাথায় রেখে আমরা পুরাতন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি না।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে না এমন কোন আইন নেই। হাইকোর্টের রুলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর