৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যন্তরে শেখ হাসিনার পতনের পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির কার্যক্রমে এবং তাদের কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। মাঠে সক্রিয় থাকার পরিবর্তে, দলটি এখন রাজনৈতিক লড়াইয়ের জন্য প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর করছে। ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক বার্তা, তথ্য এবং সমর্থন বজায় রাখতে নিয়মিতভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থকদের দিকনির্দেশনা দিয়ে, দলীয় মনোভাব শক্তিশালী করতে এবং বিরোধীদের মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে। দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সময়ে কর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে দলীয় সংহতির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় থাকার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগ বজায় রাখতে পারবে না। দীর্ঘমেয়াদে মাঠ পর্যায়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির অভাব দলীয় ভিত্তিকে দুর্বল করতে পারে। মাঠের রাজনীতি না থাকলে সাধারণ মানুষের সাথে সজীব সংযোগ তৈরি এবং জনসমর্থন ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
অনেকেই মনে করেন যে, সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তিশালী উপস্থিতি জনমত গঠনে সহায়ক হলেও, রাজনৈতিক শক্তি এবং প্রভাব টিকিয়ে রাখতে মাঠ পর্যায়ের সক্রিয় রাজনীতি অপরিহার্য। আওয়ামী লীগ যদি সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি মাঠের রাজনীতিতে ফিরে না আসে, তবে ভবিষ্যতে জনগণের আস্থা ও সমর্থন ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ সক্রিয় আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তাদের ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া হচ্ছে নানা বার্তা। অজ্ঞাত স্থান থেকে গত বুধবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দলটি পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ লিখেছে, পুলিশের কর্মকর্তারা আগে নিজেদের সহকর্মীদের হত্যার বিচার চান যারা পুলিশ সদস্যদের হত্যা করেছে, ঝুলিয়ে মেরেছে তাদের গ্রেফতার করুন।
পরবর্তীতে আজ বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে দলটি পুলিশ সদস্যদের সর্তক করে জানিয়েছে, আপনাদের ওসি, এসি, ডিসি আর এস পি স্যাররা অবৈধ সরকার ও বিএনপি জামাতকে খুশি করতে আপনাদেরকে দিয়েই ভুয়া মামলা দায়ের করাচ্ছে। এই মামলাগুলোর দায়ভার কিন্তু আপনাদেরকেই নিতে হবে। মানবাধিকার সংস্থায় প্রতিটি মামলার তথ্য পাঠানো হচ্ছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ৫ আগস্টের পর ৯৯% মামলাই ভুয়া। তাই অন্যায় আদেশ আপনারা পালন করার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করুন।
এর আগে, টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে হেলিকপ্টারযোগে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন দলের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও কেন্দ্রীয় অনেক নেতার খোঁজ এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছেন।
এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরও কেন দলকে শক্তিশালী করা যায়নি, সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। অনেকে আবার দলের সিনিয়র নেতাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার ভাষ্যমতে, রাজনীতিতে উত্থান-পতন রয়েছে। এক দল সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবে না। আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলাম। এখন ক্ষমতায় নেই। দেশের যে পরিস্থিতি, সেজন্য অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে নেতাকর্মীরা আবার মাঠে নামবেন। এখন নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করা উচিত নয়। নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর