কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা গ্রাম্য হাটে বসা নরসুন্দর। মানুষ স্বভাবগত ভাবে সুন্দরের পূজারি। আর এই সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল ও দাড়ি। যা নিয়ে মানুষের ভাবনারও শেষ নেই। ছেলেদের সৌন্দর্যের অনেকটাই বহন করে চুল-দাড়িতেই। তাই সৌন্দর্য বর্ধনে নরসুন্দরের কদর ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। চুল ও দাড়ি কেটে সুন্দর করা যাদের পেশা তারাই নরসুন্দর। এরা আমাদের কাছে নাপিত হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই পিঁড়িতে বসে চুল কাটা হারিয়ে যেতে বসেছে। পিঁড়িতে বা খাটিয়ায় বসে নরসুন্দর এর হাঁটুর নিচে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কাটার রীতি আবহমান কাল ধরে চলে এলেও সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্রামীণ ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে প্রায়।
কালের বিবর্তনে আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়ায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসেছে পরিবর্তন, গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক সেলুন, জেন্টস পার্লার, লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। সাপ্তাহিক হাটে এখনো হঠাৎ চোখে পড়ে চিরচেনা পুরোনো সেই দৃশ্য। স্বল্প খরচের কথা মাথায় রেখে নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের কাছে চুল-দাড়ি কামায়।
নরসুন্দর সুরেশ চন্দ্র শীল জানান, এ হাট সপ্তাহে বুধবার বসে। এই হাট ছাড়াও অন্য হাটেও এ কাজ করি। আগে দোকানে কাজ করতাম, আজ হতে ৩০-৩৫ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটা ৫-১০ টাকা ছিল। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে ভালে ভাবেই সংসার চলতো কিন্তু বর্তমানে চুল কাটতে ৩৫-৪০ টাকা এবং দাড়ি কাটতে ১৫-২০ টাকা নেই। তবে এত কমদামে / খোলা আকাশের নিচে চুল দাড়ি কাটার মানুষ পাওয়া যায় কম। সারাদিনে ৩৫০-৪০০ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি।
চুল কাটাতে আসা লাল চাঁন মিয়া সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চুল কাটাই ও সেব হই। যদিও বর্তমানে অনেক আধুনিক সেলুন আছে কিন্তু ওখানে চুল কাটা আমাদের সাধ ও সাধ্যের বাইরে, তাই সাশ্রয়ী/কম দামে এই সব নাপিতের কাছেই চুল কাটাইতে আসি।
দোয়াজানি কলেজ পাড়ার আহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে গ্রামের হাটে যেতাম। সেখানে পিড়িতে বসে নাপিতরা চুল কেটে দিত আর এখনকার ছেলে-মেয়েদের চুল কাটায় আধুনিক সেলুন এগুলোতে। আমরা এখনো এই দৃশ্য নিজের চোখে দেখলেও একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিছকই গল্প মনে হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর