
কক্সবাজারের কলাতলীর পর্যটন জোনের হোটেল ইউনি রিসোর্টে ‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করছিল বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা (বাইসস) কক্সবাজার জেলা শাখা।
এসময় অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১৮ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ অভিযান চলে। হোটেলের পঞ্চম তলার হলরুমে মতবিনিময় সভা করছিলেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকেল থেকে ইউনি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা (বাইসস) কক্সবাজার জেলা শাখা। সেখানে আনুমানিক ৭০ জন জনপ্রতিনিধি অংশ নেন।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে বিপুল পরিমাণ তরুণ হলরুমটি ঘেরাও করে তাদের আটকে দেন। পরে পুলিশ ও সমন্বয়ক পরিচয়ধারীরা হলে ঢুকে তল্লাশি ও যাচাই-বাছাই শুরু করেন। দীর্ঘ সময় পর ১৮ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেন তারা। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের গোপন বৈঠক করার খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে আটক ১৮ ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটির নেতা। তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় সন্দেহজনক আসামি হিসেবে আটক দেখানো হয়েছে। অনেক ইউপি সদস্য আছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে-তাদের আটক করা হবে এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হোটেল ঘেরাও করায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় হোটেলটির আশপাশের এলাকায়। হোটেলে অবস্থান করা পর্যটকদের হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
পুলিশের অভিযানে অর্ধশতাধিক সমন্বয়ক পরিচয়ধারী লোকজন কেন? পাশাপাশি তারা রহস্যজনক কারণে অনেক জনপ্রতিনিধিদের বেরিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। এমন অভিযোগের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি।
আটক হয়ে থানায় যাওয়ার সময় টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জহির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, পূর্বনির্ধারিত সময় অনুসারে শুক্রবার ইউপি সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাইসস জেলা শাখার আলোচনা সভা ছিল। আমরা প্রায় ৭০ জনের মতো ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলাম। সেখানে দেশের ক্রান্তিকালে কীভাবে কাজ করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। হঠাৎ অতর্কিতভাবে পুলিশ ও সমন্বয়ক পরিচয়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক ঢুকে আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইলসহ শরীর তল্লাশির পর আটক করে। যদি আমাদের গোপন বৈঠক থাকতো তাহলে সড়কের পাশে হোটেলে এত বড় অনুষ্ঠান হতো না। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
সভায় পুলিশ-সমন্বয়ক যৌথ তল্লাশি থেকে বের হওয়া মহেশখালীর ইউপি সদস্য সেলিম বলেন, আমাদের বাইসসের আলোচনা সভা ছিল। মেম্বারদের মাঝে সব রাজনৈতিক দলের মানুষও ছিল। কিন্তু অকারণে এভাবে আমাদের ভাইদের আটক করা হয়েছে, এর তীব্র নিন্দা জানাই।
ইউনি রিসোর্টে অবস্থান করা এক পর্যটক দম্পতি বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে এ হোটেলে উঠেছিলাম। হঠাৎ বেশকিছু যুবক হোটেল ঘেরাও করে। পরে পুলিশ হোটেলে আসে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয়ে হোটেলে ঢোকেন অনেক তরুণ। আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না। তাই চলে যাচ্ছি।
চ্যা নেল টু য়েন্টি ফো রের জেলা প্রতিনিধি আজিম নিহাদ বলেন, হোটেলে পুলিশি অভিযান চলছে, এমন খবরে একদল সাংবাদিক নিউজ সংগ্রহ করতে যায়। ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামধারী একদল তরুণ। দালাল বলে গালিগালাজ করে এক যুবক নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে ক্যামেরায় লাথি দেয়। এসময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
এদিকে শুক্রবার রাতে ইউনি রিসোর্টে ঘটা ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের সমালোচনা চলছে।
সাংবাদিক আজিম নিহাদ লিখেন, ‘ইউনি রিসোর্টের গোপন বৈঠক থেকে রাতে ইউপি সদস্যদের আটক করেছে পুলিশ। যাচাই-বাছাই করে বিভিন্ন মামলায় আটক দেখাচ্ছে তাদের। এটা সাংবাদিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ।
এখন প্রথম প্রশ্ন হলো- এতরাতে হোটেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরিচয় দিয়ে আপনাদের কাজ কী?
দ্বিতীয় প্রশ্ন: সাংবাদিকদের ক্যামেরায় কেন আঘাত করলেন? কাকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন সেখানে?
তৃতীয় প্রশ্ন: সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ না করলে আপনাদের কী লাভ?
জুলাই বিপ্লব কি আপনাদের বাবার নাকি দাদার? আমাদের খতিয়ানটা একটু ঘেঁটে দেখিয়েন। আপনাদের প্রত্যেকের আক্রমণ সাংবাদিকদের ক্যামেরাবন্দি হয়েছে। সুতরাং সাধু সাবধান।’
সেই স্ট্যাটাসে এবি বাবু সিআর জেড (ইংরেজিতে) সাজন বড়ুয়া সাজুকে ম্যানশন করে লিখেন, ‘ভাইয়া আমাদেরকে জাস্ট যাজ করার জন্য নিয়ে গেছে চিনে নাকি দেখার জন্য কবর (খবর) নিয়ে দেকার (দেখার) জন্য।’
তার উত্তরে মুখোশ উন্মোচন আইডি থেকে লিখেন, ‘এরা সবাই হোটেল-মোটেল জোনের ত্রাস ‘ফকির গ্রুপের সদস্য।’ এরা পর্যটকদের অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। এদের নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের ওয়ার্ড সভাপতি রায়হান। এরা কেউ ছাত্র নয়। তুই কোন কলেজের ছাত্র? তুই বেটা জীবনে কোনোদিন কলেজের মাটি চোখেও দেখিসনি। আগে ছাত্র হ, তারপর কথা বলতে আছিস। তোদের টোকাই গ্রুপের নামসহ আসতেছে- অপেক্ষা কর।’
এতে সমন্বয়ক কর্মী পরিচয়ে আরও অনেকজন নিজেদের নিয়ে ইতিবাচক কথা লিখেন। এর বিপরীতে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
এদিকে আটকদের পরিচয় ও তাদের বিষয়ে সর্বশেষ কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ফয়জুল আজীম নোমানকে ফোন করা হয়। রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
একইভাবে জানতে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহর সরকারি নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলে তারও উত্তর দেননি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর