রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ ৪ টি অনুষদে ২২ টি বিভাগে অধ্যয়নরত প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের দিক থেকে অন্যতম বৃহৎ ও ব্যস্ত এই প্রতিষ্ঠানে মাসখানেক ধরেই টানা আয়োজিত হয়ে আসছে বিভিন্ন বিভাগের নবীনবরণ, ভোজ অনুষ্ঠান, র্যাগ ডে ইত্যাদি নামে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রথম দিকে বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক হলেও সময়ের সাথে অনুষ্ঠানে আড়ম্বর ও আয়োজন বৃদ্ধি পেয়ে তা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে৷ উচ্চমাত্রায় সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহার, যত্রতত্র অনুষ্ঠানের আয়োজনে ব্যাহত হচ্ছে ক্যাম্পাসে পাঠদান ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম৷ অন্যদিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থানরত দুটি ছাত্রীনিবাসেও পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব৷ তাই ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে সমালোচনার ঝড়৷
শিক্ষার্থী বিবেচনায় ছোট ক্যাম্পাসে একই জায়গাগুলোকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয়ে চলছে বিভিন্ন বিভাগভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ শুরুর দিকে অনুষ্ঠানগুলো বিভিন্ন বিভাগের ক্লাসরুমের চারদেয়ালের ভেতর আবদ্ধ থাকলেও সময়ের সাথে তার পরিসর বৃদ্ধি পেয়ে আয়োজিত হচ্ছে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে৷ কখনো মসজিদের পাশে, কখনো বা ছাত্রীনিবাস সংলগ্ন শহীদ বরকত মিলনায়তনের সাথে৷ অনুষ্ঠানের উচ্চমাত্রার সাউন্ড সিস্টেমের ফলে ব্যাহত হচ্ছে মসজিদে ইবাদত, ছাত্রীনিবাসে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা৷ অন্যদিকে শ্রেণি কার্যক্রমেও পড়ছে এর তীব্র প্রভাব৷ তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে তীব্র সমালোচনার ঝড়৷
হাবিবুর রহমান সাগর নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক এবং বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান থাকা দোষের কিছু না, তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যদি ভোগান্তির কারণ হয় তাহলে সেটা মোটেই ভালো না। সামনে অনার্স চতুর্থ এবং প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। স্বাধীনতা উপভোগ করুন, তবে অন্য কারো স্বাধীনতায় বাঁধা সৃষ্টি করে নয়।’
ইংরেজি বিভাগের এনামুল হাসান বলেন, ‘কলেজে টানা তিনদিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাংলা, দর্শন ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ মসজিদের পাশে করেছে। যেখানে উচ্চশব্দে গান বাজানো, গান গেয়েছে এবং মঞ্চে নৃত্য করেছে। যদিও নামাজের কিছু সময় বন্ধ রেখেছিল। তবুও জামায়াতের বাইরে যারা মসজিদে নামাজ আদায়ে গেছে, তারা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আর মসজিদের পাশে এমন নৃত্য পরিবেশনের আসর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শামিল।’
ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে৷ সুমাইয়া তাহমি নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, ‘উচ্চশিক্ষার নামে আপনারা বেসিক কমনসেন্স হারিয়ে ফেলেছেন৷ ১২ তারিখ চতুর্থ বর্ষের (অনার্স) পরীক্ষা৷ প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এত জোরে স্পিকার বাজিয়ে আপনারা কি করছেন৷’
মসজিদের পাশে উচ্চশব্দে গান বাজানোর প্রতিবাদে আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘মসজিদের পাশে অনুষ্ঠানের আয়োজনে দেরি করে নামাজে অংশ নেওয়ারা উচ্চমাত্রার সাউন্ডের কারণে নামাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা পড়ছিল।’ এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে ও মসজিদের পাশে অনুষ্ঠানের আয়োজন বন্ধে উপাধ্যক্ষ বরাবর আবেদনও করে একদল শিক্ষার্থী৷
জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মণ্ডল বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানগণকে জানিয়েছি যে, ভোজের অনুষ্ঠান ২টা থেকে চারটা পর্যন্ত চলবে এবং খুব উচ্চশব্দে কিছু করা যাবে না। তাছাড়া বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষকরা উপস্থিত থেকে পুরো অনুষ্ঠান শেষ করে তারপর যাবে। কিন্তু এ নিয়ম কেউই মানছে না৷ আমরা নতুন করে আর কোনো অনুষ্ঠানের অনুমতি দেবো না৷’
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর