
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে রাতভর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। রবিবার (১০ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১১টা থেকে ভোররাত ৪টা পর্যন্ত ওই অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বাংলা ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ভোগাই নদীর বালু মহালে কালাকুমা, হাতিপাগার, নয়াবিল, ফুলপুর ও মন্ডলিয়াপাড়া এই পাঁচটি মৌজায় মোট ৯ একর ৮২ শতাংশ ইজারা প্রদান করা হয়েছে। আর চেল্লাখালী নদীর দুটি ভাগে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চেল্লাখালী বালুমহালে বাতকুচি, পলাশীকুড়া, নন্নী, তাজুরাবাদ ও সন্যাসীভিটা এসব মৌজায় ২২ একর।
ওই নদীর বুরুঙ্গা ও আন্ধারুপাড়া বাইগরপাড়া বালুমহালে দুটি মৌজায় ১৯ একর ৯ শতাংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে। এই বালু মহাল গুলি থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেলেও প্রভাবশালীরা নদীর ত্রিশ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যেখানেই বালু আছে সেখান থেকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। বর্তমানে নদীতে বালুর মজুদ শেষ হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে ও নদীর তলদেশের মাটি ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করে নিচ থেকে খনিজ সম্পদ বালু উত্তোলন শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। এতে নদীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি বাড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে নদী তেমনি ধসে পড়ছে আশপাশের স্থাপনা ও নদীর পাড়ে বসবাসরত মানুষের বাড়িঘর।
এদিকে, রোববার রাতের অভিযানের আগমন সংবাদ টের পেয়ে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা ড্রেজার মেশিন ছেড়ে ও আটক এড়াতে নদীর পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ও দৌড়ে পালিয়ে যান। ওই অভিযানে ভোগাই নদীর উজানে ৩টি বালু বোঝাই ট্রাক ও ১টি বেকু মেশিন জব্দ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এনে রাখেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, গত তিন মাসে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে রাজস্ব আদায় করেছেন। দুইজনকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। চারজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি মিনি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩ লক্ষ ঘনফুট বালু জব্দ করা অবস্থায় আছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা বলেন, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর ইজারাবর্হিভূত এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে নদীর উজানে বালু উত্তোলন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ভাটির দিকেও অভিযান শুরু করা হবে। তাই সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দিনে রাতে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এছাড়া এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে নালিতাবাড়ী উপজেলাবাসী সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর