জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবি পূরণের রূপরেখা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এবং সরকারের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল ১২ টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসভা অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের পর এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিন বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। সমস্যা সমাধানের রূপরেখা প্রণয়নে আগামীকাল বারোটায় মিটিং রাখা হয়েছে। কিভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা যায় তার রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিলের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দ্রুত হল নির্মাণ এবং বর্তমান ক্যাম্পাসে আরো অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের বিষয়েও কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান বিষয়ক পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সংগঠক এ.কে.এম রাকিব বলেন, আগামীকাল(মঙ্গলবার) যদি সমস্যা সমাধানের রূপরেখা আমাদের দাবি অনুযায়ী না হয় তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
জানা যায়, আগামীকালের সভায় উপস্থিত থাকবেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত দুইজন সদস্য এবং দুইজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। এছাড়াও সভায় উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং শিক্ষা সচিব।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি সচিবালয় হয়ে শিক্ষাভবনের সামনে অবস্থান নেয় পরবর্তীতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের ১২ সদস্যের একটি দল শিক্ষা সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে সচিব অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা।
এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি আগামী তিন দিনের মধ্যে পূরণের আশ্বাস দেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন,শিক্ষার্থীদের সকল দাবিই যৌক্তিক। এর সাথে আমি একমত। নাহিদ ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্টে থাকে। তাদের হল নেই। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের দাবি সম্পূর্ণ যৌক্তিক। শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে আমি পুরোপুরি একমত। আমরা তিন দিনের মধ্যে হল করে দিতে পারবো না কিন্তু আর্মির কাছে হস্তান্তর করতে পারি। কিন্তু এর জন্য আমাদের বসতে হবে। আমরা তিন দিনের মধ্যে নতুন ক্যাম্পাস সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করবো সেই কাজ করবো।
শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি হলো -
স্বৈরাচার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ডিরেক্টর কে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাত দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসারদের হাতে এই দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে; শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা সহ ঘোষণা করতে হবে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হয়েছে ;অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার সরকারের আমলের সকল চুক্তি বাতিল করতে হবে ;সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণাকৃত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে;বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ (পাঁচশত) কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে
শিক্ষার্থীদের ৫ দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন নাওয়ার জয়া বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা জবিয়ানরা পিছিয়ে আছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের সারাদিন টিউশনি করতে হয়। আমাদের দাবি সেনাবাহিনীকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস কাজ দিতে হবে। ইউজিসি যে হিট প্রকল্প নিয়েছে তা বৈষম্যমূলক। এখানে জবিয়ানদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এদিন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রশিবির। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার বলেন, শিক্ষার্থীদের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষভাবে আজ সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত আছি। সুষ্ঠভাবে দ্রুততা সাথে নতুন ক্যাম্পাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করতে হবে। সেইসাথে হিট প্রকল্পে জবিয়ানদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এদিন বিকেলে বৈঠক শেষে আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহবুব সোহান বলেন, কাল উপাচার্য ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সকল কাগজপত্র নিয়ে আসবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুইজন প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কীভাবে সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়া যায়। সন্তোষ জনক সিদ্ধান্ত না আসলে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যাবো।
এদিন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানান জবির শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.রইছউদ্দীন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি গুলো যৌক্তিক। এটা আমাদের শিক্ষার্থীদের অধিকার।" এছাড়া আন্দোলনে ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বেলাল হোসেন, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক রিফাত হাসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার অধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর