প্রয়োজনীয় বেড়িবাঁধ না থাকায় উপকূলীয় এলাকার অনেক মানুষ এখনো ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেছে। আজ মঙ্গলবার ভয়াল সেই ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই দিনে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর আঘাত হানে প্রলয়ংকরী এক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এতে করে দেশের উপকূলীয় জনপদ পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। উপকূলীয় জেলা ভোলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এটি ‘দ্য গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’ নামে পরিচিতি পায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ ঝড়ে লণ্ড ভণ্ড রান ভূমিতে পরিণত হয় সমগ্র উপকূল। দিনটির কথা মনে করে আজও আঁতকে উঠেন স্বজনহারা মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখন ভোর প্রায় সাড়ে ৩টা। হঠাৎ বাতাসের শব্দ। কিছু বুঝে উঠার আগেই পানিতে তলিয়ে যায় ভোলাসহ দেশের বেশিরভাগ উপকূল। জোয়ারে ভেসে যায় মানুষ। সবার যেন বাঁচার আকুতি-আর্তনাদ। মুহূর্তের মধ্যে চোখের ভেসে যায় মানুষ পশুপাখির লাশ।
৭০’র ১২ নভেম্বরের দিনটি ছিল এমনি বিভীষিকাময়। যেখানে ঘূর্ণিঝড় গোর্কীর তাণ্ডবে লণ্ড ভণ্ড হয়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয় দেশের উপকূলীয় এলাকা। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় জেলা ভোলা। এক এক করে ৫৪ বছর কেটে গেলেও সেই দিনটির কথা ভুলতে পারেননি ভোলাবাসি। স্বজনহারা মানুষ ঝড়ের বর্ণনা করছিলেন এভাবেই।
প্রত্যক্ষদর্শী মোসলে উদ্দিন ও আবদুল খালেক বলেন, সেদিন দেখেছি লাশের সারি। সবার বাঁচার আকুতি ছিল। কে প্রাণ বাঁচাতে পেরেছে, কেউবা চোখের সামনে ভেসে গেছে।
তাদের বর্নানায় উঠে আসে চারদিকে লাশের সারি। সেই সব লাশ দেখলেই বোঝা যায়, জীবন বাঁচাতে তারা শেষ পর্যন্ত কত লড়াই করেছিলেন। কোন লাশ গাছে ঝুলে আছে আবার কোন লাশ মাটিতে পড়ে আছে।
সেই ঝড়ে স্বজনহারা আবুল কাসেম ও সাহাবুদ্দিন বলেন, ঝড়ের সময় আমার ফুফু এবং ভাই মারা যায়, গাছে আটকা পড়েছিল তাদের লাশ। পানিতে তলিয়ে যায় পুরো উপকূল। সেই ঝড়ে কেউ হারিয়ে বাবা, কেউ মা, কেউবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। স্বজনদের হারিয়ে আজও কেঁদে উঠেন ওই সব পরিবারগুলো। প্রলয়ংকরী ঝড়ের কথা মনে করে আজও আঁতকে উঠেন মানুষ।
এদিকে ১২ নভেম্বরের মতো ভবিষ্যতে যাতে এমন ক্ষয়ক্ষতি না হয় সে জন্য সর্বদাই প্রস্তুতির কথা জানালেন প্রশাসনের কর্মকর্তা।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান নিহতদের স্মরণ করে বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এমন ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রতিটি দুর্যোগের সময় জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে থাকে।
এদিকে ১২ নভেম্বরকে স্মরণ রাখতে উপকূল দিবস ঘোষণার দাবি বিভিন্ন সংগঠনের।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর