শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদী থেকে ইজারাবর্হিভুত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছেই। এসব অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে দিনে রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে পৌর শহরের গড়কান্দা মহল্লার আনসার ক্যাম্প এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একটি ভেকু মেশিন ও দুটি মাঝারি ধরনের ট্রাক জব্দ করেছেন নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন। এই অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বাংলা ১৪৩১ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ভোগাই নদীর বালু মহালে কালাকুমা, হাতিপাগার, নয়াবিল, ফুলপুর ও মন্ডলিয়াপাড়া এই পাঁচটি মৌজায় মোট ৯ একর ৮২ শতাংশ ইজারা প্রদান করা হয়েছে। আর চেল্লাখালী নদীর দুটি ভাগে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চেল্লাখালী বালুমহালে বাতকুচি, পলাশীকুড়া, নন্নী, তাজুরাবাদ ও সন্যাসীভিটা এসব মৌজায় ২২ একর। ওই নদীর বুরুঙ্গা ও আন্ধারুপাড়া বাইগরপাড়া বালুমহালে দুটি মৌজায় ১৯ একর ৯ শতাংশ ইজারা দেওয়া হয়েছে।
এই বালু মহাল গুলি থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেলেও প্রভাবশালীরা নদীর ত্রিশ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যেখানেই বালু আছে সেখান থেকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। বর্তমানে নদীতে বালুর মজুদ শেষ হওয়ায় নদীর পাড় ভেঙে ও নদীর তলদেশের মাটি ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করে নিচ থেকে খনিজ সম্পদ বালু উত্তোলন শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা। এতে নদীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি বাড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে নদী তেমনি ধসে পড়ছে আশপাশের স্থাপনা ও নদীর পাড়ে বসবাসরত মানুষের বাড়িঘর।
ভুক্তভোগী চেল্লাখালী নদীর বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, এক শ্রেণির বালু ব্যবসায়ীরা নদীর তীর ভেঙ্গে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করছে। এতে আমাদের গ্রামের ৫/৬ টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। তারা আমাদের কোনো নিষেধ মানছে না। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, গত তিন মাসে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে রাজস্ব আদায় করেছেন। দুইজনকে এক বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন। চারজনকে তিন মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি ভেকু মেশিন জব্দ ও মিনি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়াও ১৩ লক্ষ ঘনফুট বালু জব্দ করা অবস্থায় আছে।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা বলেন, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর ইজারাবর্হিভূত এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দিনেরাতে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। এছাড়া এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে নালিতাবাড়ী উপজেলাবাসী সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর