লেমুয়া টু মমতাজ মিয়া রাস্তা যেন ভাড়া বাড়ানোর এক সোনার খনি। যে কোন ইস্যুতেই যাচ্ছে তাই বেড়ে যায় ভাড়া। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা। রাত হলেই চলে না গাড়ি। ফলে বাড়তি দামে দেড় কি.মি সড়কে বাড়ি ফিরতে হয় দূরপাল্লার গ্রামীণ মানুষদের।
সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এখানে বিশ্বনালী নামক জায়গায় ব্রিজের কাজের জন্য দুপাশে যান চলাচলে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হয়। ফলে এখানে যাতায়াতে দুই পাশে ভাড়া নির্ধারণ হয় ১০/১০ করে ২০ টাকা।কিন্তু সর্বপ্রথম ১০ টাকা দিয়ে রাস্তাটিতে সিএনজি চলাচল শুরু হলেও রাস্তার খানাখন্দের কথা উল্লেখ করে ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বিশ্বনালী ব্রিজ উদ্বোধনের পর কিছুদিন ১৫ টাকায় ভাড়া নির্ধারণ থাকলেও এরপর আবার সিএনজি ড্রাইভাররা একত্রিত হয়ে ২০ টাকা ঘোষণা করে। কারণ হিসেবে তারা পুনরায় রাস্তা খানাখন্দের অজুহাত দাঁড় করায়।
কিন্তু এ রাস্তার জন্য এলজিইডি কিংবা উপজেলা পরিষদে সিএনজি ড্রাইভার বা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ কেউ অভিযোগ জানানোর কোন ডকুমেন্টস নেই বলে জানান কর্মকর্তা। এমনকি কেউ কখনো মৌখিক অভিযোগ ও করেন নি এ রাস্তার বিষয়ে এমনটি জানিয়েছেন উপজেলা এলজিইডির অফিস। গেল ১৫ বছরে লেমুয়ার সবচেয়ে অবহেলিত সড়ক নামে পরিচিত ছিল লেমুয়া টু মমতাজ মিয়া সড়ক। সর্বশেষ জানে আলম ৮৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দে কাজ করলেও সংস্করণের নামে হরিলুটে চিহ্ন রেখে গেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।নয়ছয় কাজ আবার শীতের সময়ে মাটি পরিবহনের গাড়ির চাকায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় সড়কটি।
গেল সেপ্টেম্বরে ভয়াবহ বন্যার কবলে রাস্তার বিটুমিনের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে ভরে যায় সড়ক।আবার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের ফলে স্টিলের ব্রিজ ভেঙে যায়। অস্থায়ী চলাচলে কাঠের ব্রিজ নির্মিত হয়। ফলে নতুন ব্রিজের কাজের জন্য লেমুয়া বাজারে যাতায়াতে গাড়ি চলাচল করতে পারে না। মানুষ কাঠের ব্রিজে হেঁটে বাজারে পৌঁছায়। এখানেই নতুন ব্রিজকে ইস্যু করে পুনরায় ১০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে তেরবাড়িয়া পর্যন্ত ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে মমতাজ মিয়া সিএনজি স্ট্যান্ড হতে লেমুয়া কাঠের ফোল পর্যন্ত ২০ টাকা এবং হাইওয়ে পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। তবে বন্যার পূর্বে পুরো রুটের ভাড়াই ছিল ২০ টাকা।
এ বিষয়ে স্থানীয় আব্দুর রহমান বাবলু, এনএ শামীম, ফজলুল করিম, শাহ আলম সবুজ,নিজাম উদ্দিন, জিসান আহমেদ সহ ২ শতাধিক মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠে। লেমুয়া-মমতাজ মিয়া রোডকে নিরব চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য হিসেবে অভিহিত করেন অনেকেই।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, ফেনীতে যত অন্যায়-অবিচার আছে, এক নাম্বারে আছে। আমি টাংগাইল এ আছি প্রায় এক বছর ধরে। এদিকে ১০কি:মি:, ১৫কি:মি: দূরত্বের সি.এন.জি, অটো ভাড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর অথচ আমাদের মমতাজ মিয়া থেকে লেমুয়া পর্যন্ত ২ কি:মি: এর ভাড়া ৩০টাকা করা হয়েছে। ফেনীর জন্য বন্যার মতো আরও আরও দুর্যোগ, আল্লাহর গজব অপেক্ষা করছে।
৩০ টাকা ভাড়া প্রতিবাদের মুখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সিএনজি চালকরা। গাড়ি বন্ধ রাখার একটি অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের কাছে আসে।
লেমুয়া ব্রীজকে ইস্যু করে বাড়তি ভাড়ার খেসারত যাত্রী কেন দিবে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রিজটির ঠিকাদার বাবুল চৌধুরী জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি স্থানীয় দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে অনুরোধ করব ভাড়া পূর্বের ন্যায় রাখতে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রতিবেদককে জানান, ভাড়া বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর