কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাহিনুল হাসানকে পূর্বের ঘটনার জের ধরে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ফার্মাসি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম সাকিব, আইসিটি বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আনোয়ার জাহেদ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সেজান খানের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসংলগ্ন ম্যাজিক প্যারাডাইসের পাশে বিসমিল্লাহ হোটেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিসমিল্লাহ হোটেলে মাহিনুল দুপুরের খাবার শেষ করে হোটেল থেকে বাহির হওয়ার সময় ওয়াসিম মাহিনুলের পথ আটকায় এবং কোন ব্যাচ তা জানতে চায়। পরিচয় জানার সত্ত্বেও গতকালের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে খেলায় ওয়াসিমকে মারধরের অভিযোগ তোলে মাহিনুলের বিরুদ্ধে। মাহিনুল অস্বীকার করলে পাশে থাকা আনোয়ার জাহেদ উত্তেজিত হয়ে লাঠি নিয়ে মাহিনুলকে তাদের সঙ্গে যেতে বাধ্য করে। পরে বিসমিল্লাহ হোটেলের পাশে গুদামের সামনে নিয়ে গিয়ে জাহেদ, ওয়াসিম ও সেজান মাইনুলকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে তারা লাঠি ও চাবির রিং দিয়ে মাইনুলের শরীরে ও মাথায় আঘাত করে, যার ফলে মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। রক্তাক্ত অবস্থায়ও তারা মাইনুলকে আটকে রাখার চেষ্টা করে, তবে ১৫তম ব্যাচের সাইফ ও আরও দুজন এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আঘাতের বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাক্তার আতাউর রহমান বলেন, 'যখন সে এসেছিল তার মাথায় দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মাথায় ও হাতে আঘাত পেয়েছে । তাই দুইটা এক্সরে পরীক্ষা করতে দিয়েছি। হাতের আঘাতটি বড় কিছু হতে পারতো মিনিমাম ৬ মাস কোনো কাজ করতে পারতো না। এখন তার বিশ্রাম প্রয়োজন। আপাতত কয়েকদিন হাত দিয়ে ভারী কাজ করা যাবে না।
ভুক্তভোগী মাহিনুল বলেন, আমি খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় ওয়াসিম, আনোয়ার ও সেজান ভাই পথ আটকায়। আমি কোন বিভাগের জিজ্ঞেস করে। লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৭ ব্যাচ বলাতে আমাকে এদিকে আয় বলে তারা তিনজন মিলে বেধড়ক কিল, ঘুষি মারে। এক পর্যায় আমি মাটিতে পড়ে গেলে প্রথমে পা দিয়ে বেধড়ক লাথি মারে তারপরে আমার মাথায় তারা লাটি ও চাবির রিং দিয়ে আঘাত করে। আমার মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিব।
ওয়াসিমের সাথে থাকা তার বন্ধু আনোয়ার জাহেদ বলেন, আমি কাউকে আঘাত করি নাই। আমি তাদের মারামারি বন্ধ করতে চেয়েছি। তাহলে মাহিনুলকে কে বা কারা মারছে এমন প্রশ্নে জাহেদ বলেন, 'আমি মারিনি। ওয়াসিম মাহিনুলকে মারধর করেছে।'
অভিযুক্ত ফার্মাসি বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ওয়াসিম সাকিব বলেন,“গতকালের খেলার মাঠের ঘটনার সূত্র ধরে মাহিনুল আমাকে হেনস্তা করার চেষ্টা করে। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে একটি কটূক্তি করে বলে, ‘গতকাল যাকে মারছিলাম, সে আছে কিনা দেখ।’ এই মন্তব্যের মাধ্যমেই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এরপর, যখন পরিচয় জানতে চাওয়া হয়, তখন কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি শুরু হয়। এই ঘটনাটি আমার সাথেই ঘটেছে, আমার বন্ধুবান্ধব কেউ এই ঘটনায় জড়িত ছিল না।’
সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম বলেন, 'শিক্ষার্থীর সাথে আমার কথা হয়েছে সে মেডিকেল হসপিটালে ভর্তি আছে। আমি মৌখিক একটা অভিযোগ পেয়েছি। আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিব।'
উল্লেখ্য, গতকালকে আন্ত:বিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে লোক প্রশাসন বনাম এআইএস বিভাগের খেলার শেষদিকে বল শট নিয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের সাথে ফার্মেসি বিভাগের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে এ ঘটনার দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাল্টাপাল্টি প্রক্টরিয়াল বডি বরাবর অভিযোগ দেয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর