কুমিল্লা জেলার তিতাস জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক তরুণীকে ছয় টুকরো করে নদীতে ফেলে দেয় সাবেক প্রেমিক তারেক মাহমুদ মুন্নাসহ মামলার আসামীরা। আসামীদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে গতকাল শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তিতাস উপজেলার জগতপুর গ্রামে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা।
এ সময় হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার বা ফাঁসির দাবি জানান তারা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে জান্নাতের পরিবার এবং জগতপুর গ্রামের স্থানীয়রা। পরে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ করেছে এলাকায় একটি মিছিল বের করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মাজহারুল ইসলাম বাচ্চু, আলহাজ্ব মুকবুল হোসেন, ইয়াকুব হোসেন, মা হালিমা বেগমসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, জান্নাত পুলিশ গ্রেফতার করলেও আসামীদের মধ্যে ১নং আসামী কারাগারে রয়েছে। বাকিগুলো জামিনে বের হয়েছে এসেছে। পুলিশ যেন দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানান।
হালিমা মেয়ের মা বলেন- আমার মেয়েকে তারা বাড়ি থেকে চার্জার নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ঘর বের করে নিয়ে যায়। পরে তাকে হত্যা করে ৬ টুকরা করে নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমার দুইটি নাতি রয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই। আমি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের কাছে আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীকে ফাঁসি দাবি করছি।
জানা যায়- জান্নাতের সঙ্গে মুন্নার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালে তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ২০২৩ সালে মুন্নার সঙ্গে জান্নাতের বিয়ের ব্যাপারে গ্রাম্য সালিশে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মুন্না জান্নাতকে বিয়ে করেননি। মুন্নাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
এদিকে মুন্না জানান, জান্নাত তার চাচাতো বোন। তাদের এক বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৮ সালে তিনি বিদেশ চলে যান এবং ২০২২ সালে দেশে ফিরলে জান্নাত বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এ নিয়ে গ্রামে একাধিক সালিশ বৈঠক হয়। এক মাস পর তিনি আবার বিদেশ চলে যান। তিনি বিদেশ থাকা অবস্থায় জানতে পারেন, জান্নাতের অন্যত্র সম্পর্ক রয়েছে। এটা নিয়ে প্রশ্ন করার পর জান্নাত মুন্নার ওপর ক্ষিপ্ত হয়।
মুন্না বলেন, এক বছর পর ২০২৩ সালে আবার দেশে আসি। আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে পরিবার। জান্নাত তখন আমার সঙ্গে এবং আমার পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা করলে বিয়ে না করে আবার বিদেশ চলে যাই। ২০২৪ সালে আবার দেশে আসি এবং অন্যত্র বিয়ে করি। তখন জান্নাত খবর পেয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে আমাকে সুখে থাকতে দেবে না। মোবাইল ফোনে হুমকি দিতে থাকে আমাকে দেখে নেবে এবং আমার স্ত্রীকে সব জানাবে। তার এমন কথায় আমি হতাশ হয়ে পড়ি। তখন আমার মাথায় আসে আমি জান্নাতকে বিষয়টি বোঝাবো, না হলে মেরে ফেলব।
৫ সেপ্টেম্বর সকালে ফোন দিয়ে জান্নাতকে বলি আমার সঙ্গে দেখা করতে, সে আমাকে বলে গৌরীপুর বাজারে দেখা করবে। বেলা ১১টায় গৌরীপুর বাজারে দেখা করি এবং আমাকে রেখে দেড় ঘণ্টা অন্যত্র চলে যায়। দেড় ঘণ্টা পর আমাকে ফোন দিলে আমরা একসঙ্গে সিএনজি দিয়ে হোমনা চলে যাই, হোমনা ব্রিজে ঘোরাফেরা করি। সন্ধ্যায় সিএনজি দিয়ে আমরা কাঁঠালিয়া গ্রামে যাই। সেখানে একটি ব্রিজে অনেকক্ষণ সময় কাটাই। রাত হয়ে গেলে আমি জান্নাতকে বোঝাতে থাকি, তুমি অন্যত্র বিয়ে করে সুখী হও, আমাকেও সুখে থাকতে দাও। এতে জান্নাত রাজি হয়নি। তখন আমি তার হাতেপায়ে ধরে বোঝাই, সে আমাকে লাথি মারে।
মুন্না আরও বলেন, একপর্যায়ে আমার ব্যাগে থাকা ডাব কাটার দায়ের উলটো দিক দিয়ে তার মাথায় বাড়ি দেই। পরে কয়েকটা কোপ দিয়ে মাথা আলাদা করে ফেলি। তারপর দুই হাত, দুই পা কেটে আলাদা করে সব কাটা টুকরোগুলো নদীতে ফেলে দিই। পরে মাটিতে লেগে থাকা রক্ত আমার সঙ্গে থাকা কাপড় দিয়ে মুছে ফেলি এবং পরনের গেঞ্জি ও সঙ্গে থাকা দা, ব্যাগ নদীতে ফেলে দিই।
এ বিষয়ে জান্নাতের মা ও মামলার বাদী হালিমা বেগমসহ সাগর ফেনা গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ মুন্নার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ৫ সেপ্টেম্বর সকালে জান্নাতুল ফেরদৌসকে (২৫) অপহরণ করেন মুন্না। এ ঘটনায় জান্নাতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে মুন্নাসহ সাতজনকে আসামি করে ৯ সেপ্টেম্বর তিতাস থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। জান্নাতের হামিদ, হাবিব দুইটি বাচ্চা রয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর