কার্তিক পেরিয়ে অগ্রহায়ণ। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জমে উঠেছে গ্রামীণ নবান্ন উৎসব। ইট-পাথরের শহরের বুকে নাগরিক কোলাহলে চারুকলায় বেজে উঠেছে গ্রামীণ সুর। ‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’ এই প্রতিপাদ্যে এ বছরও গুণী শিল্পীদের সুরের মূর্ছনা, নৃত্যশিল্পীদের নিক্কণ, আবৃত্তিশিল্পীর আবৃত্তি প্রাণের সঞ্চার করেছে এই শহুরে জীবনে।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় শিল্পী হাসান আলীর বাঁশির সুরের মূর্ছনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের আয়োজন। দুভাগে ভাগ করা অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলবে। দুপুর ২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় ভাগের পরিবেশনা। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার যুগে একটা সময় নবান্ন উৎসব অনেকটাই আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে ছিল। কালের পাঠ পরিক্রমায় সেই উৎসবও হারিয়ে যেতে বসেছে। যদিও শহুরের বুকে গ্রামীণ এই উৎসবের কোনো অংশেই কমতি ছিল না। দেশজ খাবারসহ ছিল দেশজ সংস্কৃতির নানা আয়োজন।
জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদের ধারাবাহিক এবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ বছর পূর্তি হলো নবান্ন উৎসবের। এবারের আয়োজন উদ্যাপন পর্ষদের সহসভাপতি হাসিনা মমতাজকে উৎসর্গ করা হয় এবং তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধানবিজ্ঞানী ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস।
তিনি বলেন, আজ এ অনুষ্ঠানে এসে মনে হয়েছে সত্যি সত্যিই ধানের ক্ষেত থেকে উঠে আসা মানুষ। আমাদের ধানের ফলন বেড়েছে। যারা ধানের ক্ষেতে কাজ করে তারাই আসল কৃষিবিজ্ঞানী। আমাদের সমৃদ্ধির জন্য তারা সবচেয়ে বেশি কাজ করে। কিন্তু পদ্ধতিগত কারণে তাদেরই আমরা সুস্থ অবস্থায় দেখতে পাই না, তাদের অভাব যায় না। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, যে ধানের যে জাত সে নামেই বাজারে চাল থাকতে হবে। কিন্তু বাজারে নানা নামে চাল বিক্রি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। তাই আপনাদের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, আমি অমুক জাতের চাল চাই।
পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসান চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় তার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সহসভাপতি মানজার চৌধুরী সুইট।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমাদের নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের সন্ধান, আমাদের উৎসমূলের সন্ধান, আত্মিক সম্পর্কের সন্ধান দেওয়ার জন্য আমাদের এ প্রয়াস। সেই সঙ্গে আমাদের কৃষক সম্প্রদায় যারা রাতদিন অপরিসীম পরিশ্রম করে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের অন্ন জোগান দেন, তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদানও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। বাঙালির সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য বিবেচনা করে ১ অগ্রহায়ণ “জাতীয় নবান্ন উৎসব দিবস” হিসেবে সমাদৃত হোক, স্বীকৃত হোক এটি আমাদের একান্ত অভিলাষ।
এতে শিক্ষাবিদ ও আবৃত্তিশিল্পী ও জাতীয় নবান্ন উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের সহসভাপতি কাজী মদিনার সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, পর্ষদের সহসভাপতি সঙ্গীতা ইমামের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক নাঈম হাসান সুজা, আফরোজা হাসান শিল্পী ও সাবরিনা হাবিব নিপু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর