কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এক পর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। শিক্ষার্থী-শ্রমিক জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতি যেমন রোমন্থন করে পুনঃসৃজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত পরিবেশিত হয়েছে ‘লাল মজলুম।’ পুরো পথনাট্যে রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদর্শিত হয় নৃত্য, পথনাটক, পোস্টারনাটক, ইনস্টলেশন, চিত্রকর্ম, বিভিন্ন ঘরানার সংগীত।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্য থেকে পরিবেশনাটি শুরু হয়। রাজু ভাস্কর্য থেকে খণ্ড খণ্ডভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ ও চারুকলার সামনে দিয়ে শাহবাগে একটি অধিবেশনের মধ্যদিয়ে পরিবেশনাটি সোয়া ছয়টায় শেষ হয়।
পুরো আয়োজনে জুড়ে ছিল সমকালীন প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে আওয়ামী সরকারের শাসনামলে ঘটা বিভিন্ন অত্যাচার, জুলুম, বাক স্বাধীনতা হরণসহ নানা প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলা হয়। সবশেষ শেখ হাসিনার ত্যাগ ও পরবর্তীতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের খন্ডাংশের অনেক কিছুই ফুটে ওঠে ওই লাল মজলুম পথনাট্যে।
শেষে সবার উদ্দেশে কথা বলেন গণ পরিবেশনার নির্দেশক ও ঢাবির থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান।
তিনি বলেন, লাল মজলুম’ ট্রাস্ট ফান্ডিংয়ে নির্মিত একটি রাজপথ-গণপরিবেশনা। এটি একটি প্রতীকী পরিবেশনা ছিল। গত কয়েকবছরে যে পার্লামেন্টে রয়েছে, সেখানে শ্রেণিগত যে দূরত্ব রয়েছে, সেটিকে রাস্তার মধ্যে আনতে পারি কি-না। সেটা হোক শাহবাগ কিংবা অন্যখানে। যেই আন্দোলনটি হয়েছে, আমার এটিকে সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে পারি। যেখানেই প্রতিটি বিষয়ই একেকটি চরিত্র হিসেবে রয়েছে।তাই পুরো বিপ্লবটিকে আমরা সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি হিসেবে দেখতে পারি। অনেকাংশে 'লাল মজলুম' কোনো পূর্বনির্ধারিত নাট্যিক পরিবেশনা নয়। বরং স্থান-স্থাপত্য-চলমানতা ও দর্শকের সংযোগে পূর্ণ হবে 'লাল মজলুম'। এটা ছিল প্রতীকী অধিবেশন থাকলেও আমাদের কথা চলবে, এই লড়াই চলতে থাকবে।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে সহযোগী নির্দেশক ও অংশগ্রহণকারী রাগীব নাঈম, শিশির রায়, আব্বাস উদ্দিন, কূর্নিকুমা চাকমা এবং রিকশাচালক ফয়সাল বক্তব্য রাখেন।
ফয়সাল বলেন, আমি একজন রিকশা চালক। এখন আমার বয়স হয়েছে, ১৭ বছর ধরে এই প্যাডেল চালিত রিকশা চালাচ্ছি। পুরো পৃথিবী যেভাবে উন্নত হচ্ছে তারপরেও আমার প্যাডেল চালিত রিকশা চালাতে হয়। পৃথিবী যেভাবে সামনে দিকে এগোচ্ছে আমরাও এই তালের সঙ্গে সামনের দিকে এগোতে চাই। আমরা রিকশা চালকেরও ডিজিটাল যুগের সঙ্গে তাল মিলে চলতে চাই, প্রয়োজনে একটা শৃঙ্খলা আনা হোক।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, উদীচী, প্রাচ্যনাটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী-কর্মী ও বিভিন্ন পেশাজীবীসহ দুই শতাধিক কলাকুশলী এই পরিবেশনায় অভিনয় এবং বিভিন্ন স্তরে অংশ নেয়। গত অক্টোবরের শুরু থেকে পরিবেশনাটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ২ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন টিএসসির সুইমিংপুলে পরিবেশনা তৈরির মহড়া চলে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর