ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভাগের সিনিয়রদের বিরুদ্ধে নবীন জুনিয়রদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় নয় জনরে বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। মামলার পর পাঁচ জনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শেহান শরীফ শেখ, শরিফুল ইসলাম লিমন, কান্ত বড়ুয়া, জিহাদ, শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল ও ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া। এর মধ্যে, সাব্বির, শেহান শরীফ, শরিফুল, কান্ত বড়ুয়া ও সঞ্চয় বড়ুয়াকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে নয়টায় লালন শাহ হলের গণরুমে ভুক্তভোগীদের র্যাগিং শুরু করে। পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে হলের অন্য সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের হাতেনাতে ধরে রাতেই ইবি থানা পুলিশের হেফাজতে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীদের একজন দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ পাঁচ জনকে কুষ্টিয়া আদালতে প্রেরণ করে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অভিযুক্তরা কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে ভুক্তভোগীদের র্যাগিং করে আসছিল। তারা ভুক্তভোগীদেরকে নীল ছবির তারকা সাজিয়ে অভিনয় করতে বাধ্য করা, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদানসহ নানাভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।
এদিকে অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে লালন শাহ হল প্রশাসন। কমিটিতে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফখরুল ইসলাম ও হলের আবাসিক শিক্ষক রাসুল করিম। কমিটিকে আগামী রোববারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রাতেও নবীন ব্যাচের বারোজন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী এন্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা। তাদেরকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্ণ সিনেমার তারকাদের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। কাউকে পর্ণ তারকা সেজে অভিনয়ও করতে বলা হয়। এছাড়া তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয় এবং নানারকম হুমকিও দেয় অভিযুক্তরা। এছাড়াও তারা ভুক্তভোগীদেরও সিগারেট খাওয়ার অভিনয়, গাঁজা-পট টানার অভিনয়, পকের নামতা বলা ও রিলেশনশীপের উপর অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে বাধ্য করেন।
ভুক্তভোগী তারেক হোসাইন বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে আসছি ১৭ দিন। তারা আমাদের ১৭ দিনে কি পরিমাণ মানসিক নির্যাতন করেছে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এভাবে অনবরত পরিচয় দেওয়া, গালিগালাজ ও জোরজবরদস্তি করত। যেখানে যেই অবস্থানে থাকিনা কেন ৫ মিনিটির তাদের সামনে উপস্থিত হতে বাধ্য করা হতো। না আসলে মারারও হুমকি দিতো। এছাড়া প্রকাশের অনুপযোগী বিভিন্ন কথা বলতো বলে অভিযোগ করেন তারেক। আমরা এসবের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।
আরেক ভুক্তভোগী ছাত্র রাকিব বলেন, ‘আমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে মিয়া খলিফা আমার আরেক বন্ধুকে মিলে পর্ণ ভিডিও বানানোর অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করে। এ ছাড়া আরেক বন্ধুকে বান্ধবী মনে করে ইম্প্রেস করতে বলে। তারা সমকামিতা প্রমোট করতেছে বলে মনে হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তির দাবি জানাই।’
এই বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ড. আকতার হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ফরিদ উদ্দীন বলেন, মামলার পর পাঁচজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর