নবীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে মোবাইল চুরির হিড়িক পড়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান বা ভিআইপি অনুষ্ঠান থেকে মোবাইল চুরি হচ্ছে। মোবাইল চোরচক্র বেছে নিয়েছে বড় বড় জনসভা, ইসলামি সভাসহ বিভিন্নস্থান।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব চুরি সংগঠিত হচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি নবীগঞ্জ থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৬ টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, শীতের মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে ওয়াজ মাহফিল হয়ে থাকে। এসব ওয়াজ মাহফিলে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তাগনের আগমন ঘটলে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়। তখন মোবাইল চোরচক্র সেখানে জটলা সৃষ্টি করে সু-কৌশলে মোবাইল চুরি করে থাকে। গত দুই মাসে নবীগঞ্জে প্রায় শতাধিক মোবাইল চুরি হয়েছে। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি আন্তর্জাতিক সুন্নী কনফারেন্সে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। ওইস্থান থেকে ৪০/৫০ টি মোবাইল চুরি হয়, সভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের মোবাইলও চুরি হয়। ওইদিন স্থানীয় জনতা ৩ জন মোবাইল চোরকে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট, সভা সমাবেশ ও আলোচনা সভায় ইদানিং মোবাইল চুরি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব চুরির সাথে নবীগঞ্জের কিছু চিহ্নিত লোক জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
চোরাইকৃত মোবাইল সিলেট শহরের করিম উল্লাহ মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেটে মোবাইল বিক্রি করে তারা। ওই চোরাই মোবাইলগুলি সাধারণ ক্রেতা দোকান থেকে ক্রয় করে পড়েন বিপাকে। মোবাইল চুরির হিরিকের ঘটনায় নবীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ চোর চক্রের কাছ থেকে সম্প্রতি কিছু মোবাইল উদ্ধার করেছে। তবে মূল হোতারা রয়ে গেছে ধরা ছোয়ার বাহিরে।
নবীগঞ্জ শহরের মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা আনমনু গ্রামের দারোগা মিয়ার পুত্র বাদল আহমদ (৩৬)। বাদলের বিভিন্ন অপকর্ম ডাকতে তাকে সহযোগিতা করেন পৌর যুবলীগ নেতা ও তথ্য ও প্রযুক্তিলীগ পৌর শাখার সভাপতি এবং নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নানু মিয়া।
বাদল মোবাইল চুরি, বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার চুরিসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাদলের একই অঙ্গে বহু রূপ কখনও মোবাইল মেইকার, কখনও ইলেকট্রনিক দোকানের কর্মচারী, কখনও সাংবাদিক, কখনও রাজমিস্ত্রী পরিচয় দিয়ে মানুষের সাথে নানা রকম প্রতারণা করে আসছে। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত লেখা পড়া করা বাদল চোরা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফেইসবুকে নানা অপপ্রচার করে যাচ্ছে। এছাড়া উক্ত বাদলের পিতার নাম দারোগা মিয়া হওয়ার সুবাদে সে বিভিন্ন জায়গায় তার বাবা দারোগা বলেও পরিচয় দিতেন। ফলে লোকজন মনে করতো দারোগার ছেলে, তার কথা বললেই বিপদে পড়তে পারি। এমন ভয় ও আতঙ্কে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস করতেন না।
অতি সম্প্রতি বাগাউউড়া গ্রামের একব্যক্তির মোবাইল নবীগঞ্জ শহর থেকে চুরি হলে সেই মোবাইলটি নবীগঞ্জ থানার এসআই পরিমল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট শহরের করিম উল্লাহ মার্কেটের ইসলাম টেলিকম থেকে উদ্ধার করেন। সেখানে মোবাইলটি বিক্রি করেন আনমনু গ্রামের বাদল আহমদ। পরে পুলিশ বাদল আহমদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে মোবাইল চুরির কথা স্বীকার করে। পরে সাবেক কাউন্সিলর নানু মিয়ার মাধ্যমে টাকা ফেরত দিয়ে মুক্তি পায়। ইদানিং বাদল এর নেতৃত্বে মোবাইল ও ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দিনারপুরের রফিক মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, কয়েকদিন আগে নবীগঞ্জ শহরে একটি কাজে গিয়েছিলাম, হঠাৎ হাত থেকে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে দৌড় দেয় একটি যুবক, পরে আর থাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।
দেওতৈল গ্রামের সাফি বলেন, নবীগঞ্জে মোবাইল চুরি বেড়ে গেছে, গত কিছুদিন আগে নতুন বাজার পয়েন্ট থেকে আমার বোনের মোবাইল চুরি হয়।
তিমিরপুর গ্রামের তাজ উদ্দিন বলেন, বাজারে হেঁটে যাওয়ার পথে পকেট থাকা আমার মোবাইলটি কে বা কারা চুরি নিয়ে যায়।
পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের রোমান জানান, কয়েকমাস পূর্বে সিলেটের করিম উল্লাহ মার্কেট থেকে একটি মোবাইল ক্রয় করি। পরবর্তীতে কিছুদিন মোবাইল ব্যবহারের পর পুলিশ আমার সাথে যোগাযোগ করলে মোবাইলটি চোরাই বলে আমি জানতে পারি। পরে চোরাই মোবাইল নিয়ে আমি নানা ভোগান্তিতে পড়ি।
সিলেট করিম উল্লাহ মাকের্টস্থ ইসলাম টেলিকমের সাথে যোগাযোগ করা হলে বাদল বিভিন্ন সময়ে সময়ে তাদের দোকানে চোরাই মোবাইল বিক্রি করে বলে অকপটে অস্বীকার করে এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ও মোবাইল নাম্বার আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে এসআই পরিমলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন চোরাই মোবাইলের বিক্রির টাকা বাদল ফেরত দিয়েছেন।
নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, মোবাইল চোর সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের ধরতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল শনাক্ত করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, কারো মোবাইল চুরি হলে থানায় জিডি করলে আমরা সেটা উদ্ধারে চেষ্টা করবো। নবীগঞ্জ থেকে চুরি হওয়া মোবাইল আমরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসির নগর উপজেলার ধরমন্ডল থেকে অভিযান চালিয়ে ৬টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করেছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর