বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হন সেলিম। দীর্ঘ ১৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩১ জুলাই রাতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
নিহত সেলিম তালুকদার রমজানের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার শহরের টিঅ্যান্ডটি এলাকায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেডের সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন।
মারা যাওয়ার ১ বছর আগে ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি মুসলিমপাড়া এলাকার মতিউর রহমান চুন্নুর মেয়ে সুমিকে বিয়ে করেন সেলিম। বর্তমানে ৫ অন্তঃসত্ত্বা তার স্ত্রী।
নিহত সেলিমের স্ত্রী সুমি বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তান থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে কারও কাছে যেন হাতপাতা না লাগে। আমি যতদিন বাঁচব শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচব। তার সন্তানকে তার পরিচয় দেব।
আর যদি সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমি ভালোভাবে বাঁচতে পারব। তাহলে কারও কাছে অবহেলা হতে হবে না।
সেলিম তালুকদারের মা সেলিনা বেগম বলেন, মা-বাবার সামনে তার সন্তানের মৃত্যু পৃথিবীতে এর চেয়ে দুঃখ কষ্ট আর হতে পারে না। আমার যা সহায় সম্বল ছিল সবকিছু দিয়ে ছেলেকে ভার্সিটিতে লেখাপড়া করিয়েছি। আমার ছেলের আয়ে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সংসার কে চালাবে। আমার ছেলের মৃত্যুর পরে আমরা জানতে পারছি ছেলের বউ অন্তঃসত্ত্বা। তার অনাগত সন্তানকে দেখে যেতে পারল না। আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে যা সম্পূর্ণ মানুষের কাছ থেকে ধার নিয়ে। সেই টাকা সব এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। আমরা চাই আমার ছেলেকে রাষ্ট্র্রীয় সম্মাননা দেওয়া হোক।
সেলিমের বাবা সুলতান তালুকদার বলেন, ঘটনার দিন বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওনা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। এসময় মাথা, বুক ও পিঠে তার গুলি লাগে। ফুসফুসেও গুলি লাগে। সেলিমের মুঠোফোন থেকে কল করে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানান। পরে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করেন। চার দিন বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে শেষে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর