স্কুলের বারান্দা-মাঠে-ঘাটে পড়ে ছিল এই বৃদ্ধা মহিলা। এভাবে ছিন্নমূল অবস্থায় কেটে গেছে আট বছর। আশি ছুঁইছুঁই করছে তার বয়স। ঠিকানা কেউ জানে না, তিনিও কিছু বলতে পারছেন না। তাঁকে ঘর নির্মাণ করে সেখানে সোমবার (২৫ নভেম্বর) থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শাকিল আহমেদ।
এলাকাবাসীর ধারণা,হয়তো তার স্বজনরা তাকে এখানে রেখে গেছে বা পেলে গেছে। পথ ভুলেও চলে আসতে পারে। তবে ৮বছরেও তার কোনো স্বজন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীদের দেয়া খাদ্যে চলছে দৈনন্দিন জীবন। বেশি ক্ষুর্ধাত হলে তিনি পাশের দোকানগুলোর সামনে বসে থাকেন। দোকানীদের অনেকেই তাঁকে ‘বুড়ি মা’কেউ কেউ পাগলি বলেও ডাকে। গোলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় তিনি থাকেন।এ প্রসঙ্গে গোলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্যাসিফ্লোরা সুলতানা বলেন, এই বৃদ্ধ মহিলা ২০১৮সন থেকে স্কুলের বারান্দায় থাকে। ওর খাদ্যের তেমন অভাব হয়না। আশপাশের লোকজন নিয়মিত খাবার দেয়। কখনও এক বেলার খাবার ২/৩জন নিয়ে আসে।
প্রথমে এ বুড়ি মাকে সঙ্গে নিয়ে ঝুপড়ি ঘর করে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী শামছুজ্জামান দুর্জয়। এরপর তাঁকে নিয়ে শুধু ‘মানুষ’ লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন ২৩ নভেম্বর। এ স্ট্যাটাসটি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদের। রোববার (২৪ নভেম্বর) তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিনশেডের ঘর নির্মাণ করে দেন।
ইউএনও মো. শাকিল আহমেদ জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজসেবা পরিষদ তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।তাকে বিছানাপত্র, চৌকি(কাঠ) ও যেহেতু বিছানা মলমূত্র ত্যাগ করে তাই প্লাস্টিক রেকসিনও দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাহফুজ ইবনে আইয়ুব জানান, শামছুজ্জামান দুর্জয়ের স্টার্টাস থেকে বিষয়টি আমরা অবহিত হয়েছি। এরপরে ইউএনও স্যারসহ আমরা গিয়েছিলাম। এই মহিলার সুচিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
তিনি আরও জানান, মহিলাকে আশপাশের লোকজন বাড়িতে নিতে চেয়েছিলো একাধিকবার। কিন্তু তিনি কারও বাড়িতে যেতে যাচ্ছেন না। তাই স্কুলের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
ইউএনও’র এ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে সমন্বয়কারী শামছুজ্জামান দুর্জয় বলেন, ইউএনও’র হস্তক্ষেপে দ্রুত সময়ে অসহায়ী এই নারী ঘর পেয়েছেন। বিশেষ এই কনকনে শীতের থাবা থেকে তিনি রেহাই পেলেন। এ জন্য মানবিক কাজে যাঁরা জড়িত ছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর