দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সবচেয়ে বড় স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর মাননিয়ন্ত্রনের সেতুর উপর দিয়ে পরীক্ষা মূলকভাবে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দুদিন রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়াদের উপস্থিতি সেতুর উপর দিয়ে এ ট্রেন চালানো হবে। প্রথমে ১০ কিলোমিটার পরে গতি ২০ কিলোমিটার গতিতে এরপর দ্রুত গতিতে চালিয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সেতুটি মাননিয়ন্ত্রনসহ ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারী মাসের মাঝা মাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর ট্রেন চলাচলের জন্য রেলওয়ে ব্রীজটি উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। রেলওয়ে সেতুটি চালু হলে উত্তরাঞ্চল মানুষের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সকলে।
রেলওয়ে সেতুর সিনিয়র সেফটি ইঞ্জিনিয়ার মো. মাসুম জানান, ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দুদিন নবনির্মিত সেতুর উপর দিয়ে প্রস্তুতিমুলককভাবে ট্রেন চালানো হবে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ১০ কিলোমিটার গতিতে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর থেকে ট্রেন চালিয়ে সিরাজগঞ্জে অংশে নেয়া হয়। এরপর সিরাজগঞ্জ অংশ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালিয়ে টাঙ্গাইল অংশে আনা হয়। এভাবে দুদিন গতিতে বাড়িয়ে মিটার গেজ ও ব্রডগেজ লাইনে ট্রেন চালানো হবে। ট্রেন চালানোর সময় ব্রীজের মাননিয়ন্ত্রনে জাপানি ডিভাইস দিয়ে ব্রীজের কম্পন সহায়তা ও স্মুথনেস পরীক্ষা করা হচ্ছে। রেলওয়ের ব্রীজের বিভিন্ন সেক্টরের ইঞ্জিনিয়াররা এ সকল কাজগুলো পরীক্ষা করছেন।
রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান জানান, সেতুটির কাজ পুরোপুরি শেষ। পরীক্ষামূলকভাবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে ট্রেন চলেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যায়ে। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলার সময় রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর পিয়ার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করেছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। দিন-রাত সমান্তরাল কাজ করে ব্রীজটির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রকল্পের তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করছে। নতুন রেলওয়ে সেতু চালু হলে দিনে চলবে ৮৮টি ট্রেন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করে, সেখানে নতুন এই রেল সেতুতে ব্রড গেজ ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে। রেলওয়ে সেতু দিয়ে মালবাহী ও যাত্রীবাহী দুধরনের ট্রেন চলাচল করবে। এ কারনেপণ্য ও যাত্রী পরিবহনে গতি বাড়বে। কমে যাবে পরিবহনের খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও কমে আসবে। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তে সূচনা হবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে সেটা আর থাকবে না। রেলসেতু উত্তরাঞ্চল মানুষের ভাগ্য খুলে দিবে। রেলওয়ে সেতুকে ঘিরে শিল্পপার্ক ও ইকোনোমিক জোনসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠছে। উৎপাদিত পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষি পন্যসহ স্বল্প খরচে, সঠিক সময়ে পরিবহন করলে কৃষরাও উপকৃত হবে। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর