টানা ৫ দিন যাবত বেনাপোলের সাথে দেশের সকল প্রান্তের দূরপাল্লার যাত্রী সেবাই নিয়োজিত পরিবহণ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘটের ফলে, দেশের সর্ববৃহৎ স্থল প্রবেশপথ এ আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী অসংখ্য পাসপোর্ট যাত্রী নর-নারীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। 

বিশেষ করে বেনাপোল থেকে ভারি ব্যাগ-বাগেজ আর বৃদ্ধ নারী-পুরুষ ও শিশুদের নিয়ে দূরদূরান্তের গন্তব্যে রওনা দেওয়া পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য মহাকাল হয়ে দাড়িয়েছে এখন পরিবহনসেবা। উত্তরণে, তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বারংবার কুলি-মজুরের পারিশ্রমিক ও প্রাইভেটকার অথবা অন্যকোনো যানবাহনে করে যেতে হচ্ছে ৩৬ কিলোমিটার দূরে যশোর জেলা শহরে। সেখান থেকে দূরপাল্লার পরিবহনে ব্যাগ-ব্যাগেজ স্থানান্তর করে পাড়ি জমাতে হচ্ছে গন্তব্যে। তবে, টানা ৫ দিনেও স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের মনোমালিন্য জট নিরশন না হওয়ায় অসন্তোষ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন হাজার হাজার পাসপোর্ট যাত্রী ও স্থানীয়রা।

বেনাপোলে যাত্রী সেবাই কর্মরত পরিবহন কর্মীরা জানিয়েছেন, দেশের সর্ববৃহৎ স্থল প্রবেশ পথ আন্তর্জাতিক এ চেকপোস্ট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের শতভাগ সেবার মান নিশ্চিত করতে ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল ৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯৮ টাকা ব্যয়ে বেনাপোল চেকপোস্টে তিনতলা বিশিষ্ট বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল।

যার নীচ তলায় যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য কক্ষ ও টোল আদায়ের অফিস। দ্বিতীয় তলায় যাত্রীদের বিশ্রামাগার ও ক্যান্টিন, তৃতীয় তলায় ভিআইপি যাত্রীদের জন্য রেস্ট হাউস রয়েছে। ২০১৩ সালের ২৩ অগস্ট এই বাস টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন ও দ্বার উন্মোচন করা হয়।

এতোদিন এই বাস টার্মিনাল থেকেই ভারত যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের সুবিধায় দূরপাল্লার সকল পরিবহন ছেড়ে যেতো এবং দূরদূরান্ত থেকে যাত্রী সেবার পরিবহনগুলো এখানে এসে যাত্রী নামিয়ে দিতো। কথিত আছে, ইতিমধ্যে বেনাপোল বন্দরে দীর্ঘক্ষণ যানজট সৃষ্টি হওয়ায় তা নিরসনে পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারের নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন, যশোর। যা, পরিবহন কর্তৃপক্ষ বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোর্ট বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের অনেকটা জনমানব শূন্য এলাকা কাগজপুকুরে অবস্থিত পরিত্যক্ত পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে সহমত পোষন করে এবং দিনের বাসগুলো সেখান থেকেই ছাড়তো।

তবে, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধার্থে স্বার্থরক্ষায় দূরপাল্লার রাতের পরিবহনগুলো রাতের জনমানবশূন্য কাগজপুকুর পৌর বাস টার্মিনালে না থেমে চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছিলো এবং সেখানে পরিবহনের পার্কি না করে প্রশাসন ঘোষিত পৌর টার্মিনালে চলে যেতো। এরই মধ্যে হঠাৎ ২২-নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকাসহ দূরদূরান্ত থেকে ছেড়ে আসা পরিবহণ থেকে যাত্রী নামিয়ে নেয় পৌর বাস টার্মিনালে। তাতে যাত্রী সেবাই হয়রানি, সিনতাইসহ ব্যাগ-ব্যাগেজ বহনে মারাত্মক জট, নারী-শিশু ও বৃদ্ধ নিয়ে জনমানব শূন্য নিশিরাতে ৪ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে চেকপোস্টে গমনা-গমনে মারাত্মক জটিলতা দেখা যায়।

এরই প্রতিবাদে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বেনাপোল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখে। যা নিয়ে গত রবিবার বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রশাসনের সাথে বৈঠক করেছেন শ্রমিক নেতারা। বৈঠকে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় টানা ৫ম দিনের মতো বেনাপোল রুটে দূরপাল্লার সকল যাত্রী সেবা পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু।

তবে, টানা ৫ দিন দুর পাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীরা দ্রুত এ কৃত্রিম দুর্যোগের সমাধান চেয়েছেন। যাত্রীরা বলেছেন, এ বন্ধের কবলে পড়ে তাদেরকে পথে পথে হয়রানির সিকার হয়ে অতিরিক্ত টাকায় গন্তব্যে পাড়ি জমাতে হচ্ছে।

যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু জানান. বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দর ভেহিকেল টার্মিনাল চালু হওয়ায় কমেছে দীর্ঘ সময়ের যানজট। যেকারণে দূরদূরান্তের যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি নজরে এনে কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে কথা হয় বেনাপোল পৌর প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসানের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, পরিবহনগুলো পৌর বাস টার্মিনালে স্থানান্তরের বিষয়টি সম্পূর্ণ বন্দর কর্তৃপক্ষের বিষয়। এনিয়ে বেনাপোল পৌরসভা বা উপজেলা অথবা জেলা প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ নেই।

কথা হয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনাপোল স্থলবন্দরের জ্যৈষ্ঠ এক কর্মকর্তার সাথে। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও উর্দ্ধোতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বাস টার্মিনালের পরিবর্তে পৌর ট্রাক টার্মিনালে পরিবহনের যাত্রী উঠানো-নামানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি বা এখানে কর্মরত যে কেহ সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না।

জানা যায়, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট থেকে স্থলপথে ভারতের বড় একটি বাণিজ্যিক শহর কোলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার হওয়ায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজে হওয়ায় প্রতিদিন এ পথে চিকিৎসা, ব্যবসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কাজে ৫ থেকে ৭ হাজার পাসপোর্ট যাতায়াত করে থাকে। যে কারণে এ রুটে পরিবহন সেবা বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছে অসংখ্য পাসপোর্ট যাত্রী।

মুনতাসির/সাএ