
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন,আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার। জাতি ধর্ম নির্বিশেষ আমরা এক পরিবারের সদস্য। এরমধ্যে বিভাজন হওয়ার উচিত নয়। যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও প্রতিবন্ধীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রোটেশন পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকারে নারীদের জন্য ভোট হতে পারে। এতে পর্যায়ক্রমে নারীরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যেমন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ভোট হয়। বাস্তবে সেখানে নারীর প্রতিনিধিত্ব অনেক বেশি হয়। কোন কোনো জায়গায় পুরুষের চেয়েও বেশি হয়।
তিনি বলেন, আমাদের বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার। জাতি ধর্ম নির্বিশেষ আমরা এক পরিবারের সদস্য। এরমধ্যে বিভাজন হওয়ার উচিত নয়। যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল। আমরা সবাই যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করি, সুশাসন নিশ্চিত হলে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বলেন, আমাদের সুপারিশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে একটা কথা নিশ্চিত। আদিবাসী, দলিত বা পিছিয়ে পড়া কোনো গোষ্ঠী কোনো রকম যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। ভোটাধিকার থেকে শুরু করে আইনি অধিকার এগুলো যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের যে অনেকগুলো অসংগতি আছে, যা আমরা চিহ্নিত করেছি যেমন, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, উচ্চকক্ষ কীভাবে নির্বাচিত হবে, নারীর জন্য সংরক্ষণ পদ্ধতি, ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ যা অতীতের সংলাপে জোরালোভাবে এসেছে; আমরা এগুলো সততার সাথে নোট নিয়েছি। আমরা একটা ধারণা তথ্যভিত্তিক থাকা উচিত। আদিবাসী, সমতল এবং পার্বত্য এলাকায় কত, দলিতদের কত; বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর আমরা সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চাই। দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয় এই বিষয়টা জোরালোভাবে এসেছে, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন দলভিত্তিক নয়, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন সরাসরি আসবে কি-না, সে প্রস্তাবও এসেছে। ভোটার তালিকা নিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায় ও অন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমস্যা আছে। আমার পরিবারের সদস্যদের নামেও ভুল আছে। এই ব্যাপারের আমরা সুপারিশ করবো। আমাদের জন্য অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অতীতে যত অন্যায়, বৈষম্য করা হয়েছে, তা দুর করার। এমন একটা দেশ গড়তে চাই যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে। যেই চেতনা থেকে আন্দোলন হয়েছে সেই চেতনার ভিত্তিতেই আমরা পরিচালিত হতে চাই।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষাগত যোগ্য রাখার বিষয়টি রাখার জন্য একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর দাবি আছে। তবে এটা কোনো অযোগ্যতা হতে পারে না। আমরা চারপাশে যদি দেখি যারা দুর্নীতিগ্রস্ত তারা কি অশিক্ষিত, সবাই শিক্ষিত।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা যদি সুপারিশ ঠিক মতো দিতে পারি, আর সরকার যদি সেটা গ্রহণ করে, তাহলে স্থানীয় সরকারে একটা বিপ্লবিক পরিবর্তন হতে পারে। উপজেলাতে কোনো ওয়ার্ড নেই। আমরা চিন্তা করছি এখানেও ওয়ার্ড হবে। এক মহিলা, দুইজন পুরুষের সাধারণ আসন থাকবে। স্থানীয় সরকারের নারীদের সরাসরি নির্বাচন করতে বাধা নাই। তারা পারে না বলেই সংরক্ষিত করা হয়। এখন কোনো ইউনিয়নের ১৩টি ওয়ার্ডেই যদি নারী প্রার্থী আসে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
আমাদের সুপারিশ এরকম হচ্ছে উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান থাকছে না। প্রত্যেকটি উপজেলায় ওয়ার্ড হবে। একটা উপজেলায় ১০টা ইউনিয়ন থাকলে ৩০টা আসন হবে। ৩০জন নির্বাচিত হয়ে একজন চেয়ারম্যান করবেন, ভাইস চেয়ারম্যান করবেন। সরাসরি এটা হবে না। জেলা পরিষদেরও কিন্তু ওয়ার্ড থাকবে বেশি আরও। তখন কিন্তু দাঁড়ানো ও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বাড়বে। তবে আদিবাসীদের জন্য কতটুকু বাড়বে তা দেখার বিষয়। না বাড়লে তাঁদের স্থায়ী কমিটিতে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, গত তিন নির্বাচনে যে ভয়াবহতা হয়েছে, সেটা কি সামনেও হবে! এজন্য রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হতে হবে আদিবাসীদের মধ্যে। ছাত্র-জনতার মুভমেন্ট হয়েছে, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার দরকার আছে। আমি আদিবাসী থাকবো। কারো সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবো না। এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসবো।
আদিবাসী প্রতিনিধি সন্ধ্যা মালো বলেন, আদিবাসী বললে সমতল আর পাহাড়ি একদিকে হয়ে যায়। আমি মনেকরি যদি পিছিয়ে থাকা থেকে শুরু করা যায় তাহলে ভালো হবে। সবাইকে সামনে আনা যাবে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় বলেন, নির্বাচনে অভিযোগ দিলে নির্বাচন শেষ হলেও সমাধান হয় না। তাই অভিযোগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে প্রার্থিতা বাতিল করা উচিত। তাহলে কালোটাকা পেশি শক্তির প্রভাবে রোধ করা যাবে। আমরা যাকেই ভোট দিই না কেন, আমরা যদি নিজের পছন্দের মানুষকে ভোট দিই তাহলে যে নির্বাচিত হতে পারে না, তার কাছ থেকে মার খেতেই হবে।আমরা এমনিতেই ভীত। বৃটিশবিরোধী থেকে এই পর্যন্ত আদিবাসীরা কি পরিমাণ নির্যাতিত হয়েছে যে সবাই জানে। আমরা সমতলে ্েদেতা পিছিয়ে আছি যে আমাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। আমাদের যদি কিছু প্রতিনিধি থাকে। আমাদের অনেক জায়গায় প্রচুর আদিবাসী আছে।
ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সংস্কার কমিটির সদস্য জেসমিন টুলী বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে একেবারে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। এর আগে কিন্তু এমনটি হয়নি। এখন কোনো প্রার্থী জয়ী হলেও সহিংসতা করে, আর না হলেও করে।
অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার (আসুস) নির্বাহী পরিচালক রাজকুমার শাও বলেন, আদিবাসীদের ভোটার তালিকা নতুনভাবে করতে হবে। এজন্য আদিবাসীদের সেই কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে, না হলে সঠিক হবে না। আমরা যখনই কথা বলি, তখন বিভিন্ন ট্যাগ লাগানো হয়। কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি কখনো বা জামায়াত বলে ট্যাগ লাগিয়ে মারা হয়। এজন্য আমরা টিকতে পারছি না। এটা আমাদের দুর্বলতা। আমরা শিক্ষিতও নয় সেভাবে, তাই সেভাবে আমরা সাজিয়ে গুজিয়ে কথাও বলতে পারি না। স্থানীয় নির্বাচনের সময় দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়, তাহলে একজন আদিবাসী কি করে নির্বাচিত হবে। নরমাল প্রতীক হতে হবে। নির্দলীয়ভাবে স্থানীয়ভাবে নির্বাচন হতে হবে। কেননা, প্রার্থী ভালো না হলেও দলের কারণে ভোট পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সমতলের আদিবাসীদের সমস্যা আলাদা। তাই এখানেও মন্ত্রণালয়ের ডিভিশন হতে পারে। ভূমি কমিশন করা যেতে পারে। ডিগ্রি পাশ ছাড়া নির্বাচন না করতে পারলে আমাদের আদিবাসীরা তো পারবে না। কারণ তারা তো পড়াশোনায় পিছিয়ে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে রাখা যেতে পারে। আমাদের আদিবাসীদের মধ্যে অনেক নেত্রী আছে, যারা সিই করতে পারে না। তবে বক্তব্য শুনলে মনে হবে ডিগ্রি পাশ।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর