কুমিল্লা আদর্শ সদর আমড়াতলী ইউনিয়নের তৈলকুপি বাজারের একটি ফার্মেসি মালিকের ভূল চিকিৎসায় সফিয়া খাতুন (৬২) নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে তৈলকুপি বাজারে ঘটনাটি ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুমিল্লা কোতালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম।
খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আমড়াতলী ইউনিয়নের করুণাপুর পূর্বপাড়ার আয়েত আলীর স্ত্রী সফিয়া খাতুন বৃহস্পতিবার দুপুরে বমি ও গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা নিয়ে তৈলকুপি বাজারের গোলাম মোস্তফার ফার্মেসিতে পরামর্শ নিতে গেলে ওই নারীকে তিনটি ইনজেকশন পুশ করলে সাথে সাথে মৃত্যুবরণ করে।
খবর পেয়ে নিহতের পরিবার ও উত্তেজিত স্থানীয়রা অভিযুক্ত ফার্মেসিতে ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। পুলিশ আসার খবর পেয়ে ফার্মেসির মালিক গোলাম মোস্তফা পালিয়ে যায়। কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ ও দেবপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিনুল হক সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
নিহতের স্বামী আয়েত আলী ও তার পরিবার বলেন, সফিয়া খাতুন তিনি নিজে হেঁটে তৈলকুপি বাজারে যায় গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধের জন্য গোলাম মোস্তাফার ফার্মেসিতে গেলে সে ওই নারীকে তিনটি ইনজেকশন পুশ করলে সাথে সাথে মারা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গোলাম মোস্তাফা দীর্ঘদিন ধরে তৈলকুপি বাজারের ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি ও বিভিন্ন রোগীর চিকিৎসায় করতেন। সে ডাক্তার না হয়েও প্রেসক্রিপশন বিহীন ও ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কীভাবে ইনজেকশন পুশ করলেন? এই ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গোলাম মোস্তফা।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, তৈলকুপি, বাঁশমঙ্গল, ফকিরবাজার ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় এমন চিকিৎসা অহরহ চলছে। এসবের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় দিনদিন ভুয়া ডাক্তার বাড়ছে। ঘটনার কারণ জানার জন্য তৈলকুপি বাজারে ফার্মেসিতে গেলে গোলাম মোস্তাফাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় জানায় ঘটনার পর থেকে ফার্মেসির একটি সাইনবোর্ড খুলে নিয়ে গেছে এবং মালিক পলাতক রয়েছে। নিহতের নারীর ৪ ছেলে, ২ মেয়ে ও স্বামী রয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে তৈলকুপি বাজার কমিটির সভাপতি আবু জাহের প্রতিনিধিকে জানায়,অসাবধানতার কারণে নারীর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে এবং এ বিষয়টি সামাধানের জন্য বাজার কমিটি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কোতায়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মহিনুল ইসলাম জানায়, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের নারীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। একটি অপমৃত্যুর এজহার দায়ের করা হয়েছে এবং নিহত পরিবারের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা.নাছিমা আকতার জানায়, বিশেষ প্রশিক্ষণ, প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) ছাড়া একজন ফার্মাসিস্ট (ফার্মেসির মালিক) ইনজেকশন পুশ করতে পারে না। যদি করে থাকে তাহলে দেখতে হবে বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সাধারণ মানুষের আরো সচেতনতা হওয়া দরকার।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর