
নাটোরের সিংড়ায় একজন সফল উদ্যোক্তা মিনা সরকার। তার উপার্জনের টাকায় চলে সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন। তার চেষ্টা, পরিশ্রম ও অদম্য মনোবল তাকে পিছনে ফিরতে দেয়নি।
এখন সে মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। বছরে প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করেন। ভাড়া বাসা থেকে ও সন্তানের পড়ালেখা, বাড়ির কাজ ছাড়াও উদ্যোক্তা হিসেবে সফল সংগ্রামী এক নারী মিনা সরকার।
তিন মেয়ে সন্তানের মা মিনা সরকার। বড় মেয়ে রাজশ্রী সরকার, এ বছর সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ এস সিতে এ-প্লাস পেয়েছেন। সে ভবিষ্যতে নার্স হয়ে দেশ সেবা করতে চান। মেজ মেয়ে অনুশ্রী সরকার, সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে ৮ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে শ্রেয়সী সরকার মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী। ১৯৮৩ সালে সিংড়া পৌরসভার কতুয়াবাড়ী গ্রামে বাবার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রাধাগোবিন্দ, মা শ্যামলী রানী সরকার। ৪ বোন ১ ভাই এর মধ্যে মিনা সরকার দ্বিতীয় সন্তান। ২০০৪ সালে সিরাজগঞ্জের রতন কুমার সরকারের সাথে বিয়ে হয়। বাইংহাউজে চাকরি করতেন তার স্বামী।
২০১৮ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারের হাল ধরেন তিনি। ২০০০ সালে ১ বিষয়ে লেটারসহ ফাস্ট ডিভিশনে এস এস সি পাশ করেন। ২০০২ সালে এইচ এস সিতে ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। স্বামী মারা যাবার পর সংগ্রাম শুরু। একটু সেলাই মেশিনের কাজ জানতেন তাই শুরু করেন দর্জির কাজ। পাশাপাশি পাইকারি থ্রি পিছ কিনে বিক্রি করে উপার্জন শুরু করেন। সংসারের হাল থেকেই সংগ্রাম শুরু।
২০২২ সালে প্রতিবেশী টুম্পা কুন্ডু ও কনিকা কুন্ডুর সহযোগিতায় নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেন। পেজ খুলেন মিনা ফ্যাশন এন্ড ফুড। বাড়ি থেকেই পুরোদমে ব্যবসা শুরু। নানা রকমের থ্রি পিছ, কাপড়, শাড়ি, লেডিস টিশার্ট সহ মেয়েদের সব রকমের পোষাক। ফুড আইটেম হিসেবে চার রকমের কুমড়ো বড়ি নিজেই তৈরি করে বাজার জাত করেন। ভালো কুমড়ো বড়ির কারিগর হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন। ভেজালমুক্ত এবং খাঁটি দানাদার তৈরি মাসকালাই ৭০০ টাকা কেজি, মটর ডাল ৫০০ টাকা কেজি, খেসারী ৩৫০ টাকা কেজি, এাংকার ৩০০ টাকা কেজি করে বিক্রয় করেন। এছাড়া দেশি চাঁকের খাঁটি মধু, ঘি,। নাড়ু, মোয়া, সহ নানা খাদ্য সামগ্রী নিজেই তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করেন তিনি।
একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সিংড়া ডিজিটাল পল্লি সনদ পান। নাটোরে নারী মেলায় নিজস্ব স্টল দিয়ে পুরস্কৃত হন। নাটোর বিসিক শিল্প নগরীতে ৩ দিনের ট্রেনিং করেন, রাজশাহী লার্নিং ট্রেনিং সেন্টারে বেসিক বিষয়ে ট্রেনিং করেন। ঢাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোক্তা সেমিনারে অংশ নেন
সংগ্রামী নারী মিনা সরকার বলেন, আমি অনলাইন ও অফলাইনে বয়বসা করে স্বাবলম্বী হয়েছি। আমার পেইজ মিনা ফ্যাশান এন্ড ফুডস। আট বছর হলে আমার স্বামী স্ট্রোক করে মারা যায়। একের পর থেকেই সংসারের পুরো হাল ধরেছি আমি নিজেই। আমার জীবন একটা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছি। একদিকে আমার সংসার ব্যবসা অন্যদিকে মেয়েদের পড়াশোনা ঠিক রেখে কাজ করছি। বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে প্রতিনিয়ত। একজন নারী ই পারেন এতকিছু সামলিয়ে জীবনের সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে।
সিংড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুমি খাতুন বলেন, সমাজে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। মিনা সরকার একটি উদাহরণ। তার সফলতার গল্প শুনেছি। সে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা এবং সফল জননী। তার জন্য শুভকামনা। মহিলা বিষয়ক অফিস তার পাশে থাকবে, তাকে সহযোগিতা করে যাবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর