কক্সবাজারের টেকনাফে অভিযানের সময় এক কিশোরকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীর পরিবার ও প্রতিবেশীরা বলছেন, যুবলীগ নেতা বাবাকে ঘরে না পেয়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে এই শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ওই শিক্ষার্থীকে অস্ত্র মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশের দাবি, কিশোরটির বাবা ও তার এক সহযোগীকে আটক করতে গেলে তারা পালিয়ে যান। পরে কিশোরকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছে একটি শপিং ব্যাগে বিদেশি পিস্তল, গুলি, কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
আর পুলিশ বলছে, ভোরে রাস্তায় অভিযান চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে এই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এসময় তার হাতে থাকা ব্যাগে মিলেছে বিদেশি পিস্তল ও গুলি। যদিও পুলিশের দায়ের করা মামলার দুই সাক্ষী পুলিশের বক্তব্যের ভিন্ন কথা বলেছেন।
হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর নাম তাউসিফুল করিম রাফি। তার বাবা হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং উপজেলা যুবলীগের সদস্য রেজাউল করিম। তাদের বাড়ি হ্নীলার দরগাহ পাড়া এলাকার। শুক্রবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে টেকনাফ থানার পুলিশ।
ঘটনার ব্যাপারে আলাপকালে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতেই টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, ২৭ নভেম্বর ভোর ৪টার দিকে তার নেতৃত্বে এক অভিযানে হ্নীলার দরগাহ পাড়ার নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তার উপর ২ জন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আটক করা হয় তাউসিফুল করিম রাফিকে। এ সময় তার ডান হাতে থাকা একটি নীল রংয়ের শপিং ব্যাগের ভেতর ১টি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, ৪০ রাউন্ড নীল রঙের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, শিশুকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তার বাবা রেজাউল করিমের অস্ত্র এটি। তার বাবা তাকে এটি পাশের বাসার নুরুল আমিনের বাড়ির পিছনে লুকিয়ে রাখার জন্য দিয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের দায়ের করা মামলায় বাবাকে পলাতক আসামি করা হয়েছে। শিশুকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত শিশুটিকে কারাগারের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন।
ওসি বলেন, মূলত শিশুর রাফির বাবা রেজাউল করিম চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত। সন্ত্রাসী কাজের জন্য লাইসেন্সবিহীন এই অস্ত্র মজুদ করেছিল। তবে একজন স্কুলছাত্রকে অস্ত্র দিয়ে আটককে পুলিশের নাটক দাবি করেছে রাফির পরিবার। তারা শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে। পরিবারের প্রশ্ন, রাফির বাবা যদি পুলিশের চোখে অপরাধী হয় তবে, তার শিশু সন্তানকে মিথ্যা নাটক করে আটক করতে হবে কেন।
শিশুর বাবা রেজাউল করিম শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বলেন, মূলত রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশুপুত্রকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। তৌসিফুল করিম রাফি খুবই মেধাবী। সে ২০২১ সালে হ্নীলা প্রি ক্যাডেট স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে ড. গাজী কামরুল ইসলাম বৃত্তি লাভ করে। ২০২১ সালে চতুর্থ শ্রেণীতে হ্নীলা একাডেমি বৃত্তি ও ২০২২ সালে ৫ম শ্রেণীতে জি এইফ এইচ বৃত্তি পায়। চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় আমার পুত্র অংশ নিতে পারল না।
তিনি এ মামলার সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আকতার ও মৌলভী জামাল হোসাইনের সাথে আলাপ করার কথা বলেন তিনি।
প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আকতার বলেন, ওইদিন মধ্যরাতে পুলিশ তার ঘরে ঢুকে। কোনও কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে কী যেন খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার আলমারিতে অস্ত্র পেয়েছে বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়।
মৌলভী জামাল হোসাইন বলেন, ভোরে মসজিদের যাওয়ার পথে পুলিশের ওসি তাকে দাঁড় করান। ওই সময় রেজাউলের ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করতে দেখেন। ওসি তাকে জানান অস্ত্রসহ শিশুটিকে আটক করেছে। এরপর এটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। এটা মামলার সাক্ষী কিনা জানি না।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর