
চুয়াডাঙ্গায় লেগেছে শীতের আচড়। প্রকৃতিতে বিরাজ করছে হিম শীতল আবহ। দিনে দিনে বাড়ছে শীতের অনুভূতি। আর এই শীত মানেই খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি। চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড়-পাটালি দেশজুড়ে সমাদৃত। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে গাছিদেরও।
কার্তিকের শুরু থেকেই গাছ প্রস্তুত করেছে রেখেছেন চাষীরা। এখন চলছে রস সংগ্রহের কাজ। কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে গুড় তৈরির কাজও। নতুন গুড়ের সুবাস ছড়িয়েছে অগ্রহায়ণের বাতাসে। বছরে বছরে বাড়ছে গুড়ের চাহিদা। তবে এই গুড় তৈরি প্রক্রিয়ার শিল্প হারাতে বসেছে ক্রমাগত। গাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় গুড় উৎপাদনেও ভাটা পড়ছে।
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এরই মধ্যে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার প্রস্তুতি আগেই শেষ করেছেন কৃষকরা। এখন চলছে গুড় তৈরির কাজ। চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা রস থেকে গুড় ও পাটালি তৈরি করে থাকেন প্রতিবার। শীত মৌসুমে পিঠা-পুলির প্রতি চাহিদা বেশি থাকে মানুষের। এজন্য দরকার খেজুরের গুড় কিংবা পাটালি। শীত শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকে খেজুর গুড়ের চাহিদা। শীতের শুরুর দিকে গাছ থেকে রস পাওয়া যায় কম। ধীরে ধীরে তা বাড়ে। শীত বেড়ে গেলে রস বেশি হয়, গুড়ের উৎপাদনও বেড়ে যায়।
কিন্তু গুড় উৎপাদনকারিরা বলছেন, ধীরে ধীরে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ প্রস্ততকরার গাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সেই সাথে বেড়েছে গুড় উৎপাদন খরচও। তাই এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে প্রশিক্ষণ এবং সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তরুণের আগ্রহ বাড়লে বাড়বে উৎপাদনও।
কৃষকরা জানান, এখনো পুরোদমে শীত না পড়ায় কৃষকরা রসও পাচ্ছেন কম। গুড়ের উৎপাদনও কম। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পুরোদমে শুরু হবে গুড় তৈরির ব্যস্ততা। গত বছরের চেয়ে এ বছর শুরুতেই গুড়ের আকাশ ছোঁয়া দাম। গত বছর ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি হয়েছে। এ বছর ইতোমধ্যেই গুড়ের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা। এ প্রসঙ্গে কৃষকদের দাবি, গুড় তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে। গাছিদের মজুরিও বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে আগের বছরের চেয়ে এ বছর গুড়ের দাম বেশি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৬০টি খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হয়েছে। যা থেকে গুড় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কৃষক হামিদুল হক বলেন, ‘ভোরে আজানের পর গাছের কাছে আসি, এসে গাছ খুলি। তারপর গুড় তৈরি করি। এবার চারশ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করছি। এছাড়া গ্রাম থেকে সরোজগঞ্জ ও জয়রামপুর হাটে গিয়ে গুড় বিক্রি করি।’
আরেক গাছি তারিক রহমান বলেন, ‘যত শীত পড়বে তত গুড়ের চাহিদা বাড়বে। আমরাও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে দিনে দিনে গাছির সংখ্যা কমছে। আমাদের তরুণ ছেলেরা এখন আর এই কাজে আসতে চায় না। কিন্তু গুড়ের চাহিদা তো কমছে না। এভাবে চলতে থাকলে উৎপাদনে ভাটা পড়বে।’
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার খেজুর গুড় ও পাটালির সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে।
জেলার চাহিদা মিটিয়ে চুয়াডাঙ্গার গুড় চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এজন্য দেশের অন্যতম বড় খেজুর গুড়ের হাট বসে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা সেই হাটে আসেন গুড় কিনতে। ডিসেম্বরে উৎপাদন বেড়ে গেলে হাটও জমে উঠবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এটি শুধু ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা নয়, এখান থেকে অনেকের বাড়তি আয়ের উৎস তৈরি হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর