
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র(এনআইডি) নিবন্ধনের আবেদন নির্দেশনা না মেনে বাতিল করায় ৪০ জন মাঠ কর্মকর্তাকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন(ইসি)।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের উপপরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো.তকদির আহমেদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ১০ টি অঞ্চলের সকল কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিলো যে যদি কোনো প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির আবেদন সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র না থাকে তাহলে তা বাতলি বা তদন্ত করা যাবে না। এর পরও কিছু কর্মকর্তা এ নির্দেশনা অমান্য করে প্রবাসীদের আবেদনগুলো বাতিল করে দিয়েছে। এ কারণে ওই সব কর্মকর্তাদের আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে বাতিলের কারণ ব্যাখা করার জন্য বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রবাসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মিশন অফিসে যেসকল প্রবাসীগণের বায়োমেট্রিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে তাদের আবেদনগুলির সাথে CMS পোর্টালে মিশন অফিস থেকে ০৩ টি ডকুমেন্ট (১. অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, ২. পাসপোর্টের কপি, ৩. পাসপোর্ট সাইজের ছবি) সংযুক্ত না করা হলে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা আবেদনটি তদন্ত করতে পারবেন না এবং আবেদনটি বাতিল করতে পারবেন না মর্মে সূত্রোক্ত পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া সচিব মহোদয়ের সভাপতিত্বে ১০ টি অঞ্চলে জুম প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সহজীকরণ সভায় এ সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা ও নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এতদসত্ত্বেও নিম্নবর্ণিত আবেদনগুলিতে ডকুমেন্ট সংযুক্ত না থাকায় বাতিল করা হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে,উপর্যুক্ত বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হলেও উপরে উল্লিখিত প্রায় ১০০ (একশত) টি আবেদনে ০৩ টি ডকুমেন্ট সংযুক্ত না থাকা সত্ত্বেও বাতিল করা হয়েছে।
উক্ত ১০০ টি আবেদনের মধ্যে ৩৫ টি আবেদন উপজেলা নির্বাচন অফিসার, সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ কর্তৃক বাতিল করা হয়েছে যা স্পষ্টত কর্তব্য অবহেলার শামিল। এতদবিষয়ে ০১ থেকে ৬৮ ক্রমিক পর্যন্ত আবেদনের (ফরম নং) সমূহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৪ জন উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারগণকে আগামী ০২ ডিসেম্বর, সোমবার-২০২৪ তারিখে ৬৯ থেকে ৮৩ ক্রমিকের আবেদনের (ফরম নং) সমূহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৩ জন উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারগণকে আগামী ০৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার-২০২৪ তারিখে এবং ৮৪ থেকে ১০০ ক্রমিকের আবেদনের (ফরম নং) সমূহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৩ জন উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারগণকে আগামী ০৪ ডিসেম্বর, বুধবার-২০২৪ তারিখে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে মহাপরিচালক, (অতিরিক্ত সচিব) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগকে ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, কুয়েত, কাতার, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধনও হয়েছে। পরবর্তীতে ওমান, বাহরাইন, জর্দান, সিংগাপুর, লেবানন, লিবিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালদ্বীপে এনআইডি কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর অন্যান্য দেশেও হাতে নেওয়া হবে এই কার্যক্রম।
জানা যায়, ২০১৭ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মুক্ত আলোচনায় প্রবাসীদের ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে তাদের এনআইডির বিষয়টি উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, ‘দেশের প্রায় ৯০ লাখ নাগরিক (বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন এবং দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। বিভিন্ন কারণে তাদের অনেকে এনআইডি প্রস্তুত করতে পারেননি। এনআইডি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উপস্থিতি আবশ্যক। এটি প্রাপ্তি বা সংশোধনের জন্য প্রবাসীদের বাংলাদেশে আসতে হয়। ফলে তারা ভোগান্তির সম্মুখীন হন।
তাই বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, সশোধন ও স্মার্টকার্ড দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। সে সময় প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন। পরে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীদের এনআইডি দেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি প্রদান ও ভোটাধিকার সংক্রান্ত একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা তাদের মতামত দেন। পরে ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর নতুন ওয়েবসাইট উদ্বোধনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। তৃতীয় দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের এনআইডি দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। এরপর আর কোনো দেশে কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়নি।
সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সতত্যা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন সম্প্রতি পদত্যাগী কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর