কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। যেখানে টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও অনেক ধরনের চিঠি পাওয়া যায়। যা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে পাগলা মসজিদের দান বাক্সে ফেলে রাখেন সাধারণ মানুষ। এবার সুন্দর ও চিকন হতে চেয়ে একটি চিঠি, প্রেমিক প্রেমিকা পেতে চিঠি, ছেলেকে ভালো করার জন্য মায়ের চিঠি, আব্বু-আম্মুকে ভালো রাখার জন্য সন্তানের চিঠি, প্রিয় মানুষকে সব সময় ভালো রাখার জন্য চিঠি, অসমাপ্ত কাহিনি নিয়ে চিঠি, মা-বাব ডাক শোনার জন্য চিঠিসহ নানান রকমের চিঠি পাওয়া গেলো পাগলা মসজিদের দানবাক্সে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টায় পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়। এরপর দিনভর চলে গণনা কার্যক্রম। সেখানে পাওয়া গেছে বেশ কিছু চিঠি। ইতোমধ্যে এসব চিঠি ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
চিঠি খুলতেই দেখা যায় এতে লেখা রয়েছে, ‘আল্লাহ তুমি আমাকে সারাজীবনের জন্য চিকন বানাইয়া দাও দয়া করে। আমি ও পাতিবাবু সারাজীবন একসাথে থাকতে চাই। আমাদের দুজনকে একসাথে রাইখো। তার আগে আমার মৃত্যু দিও। আমাদের মধ্যে যেন কোনো শাঁকচুন্নি না আসে। জান্নাতেও যেন আমার পাতিবাবু কোনো হুর না পায়। আল্লাহ তুমি ঠাকুমার ঝুলি কার্টুনে যে রকম পুকুর ছিল সেরকম জাদুর পুকুরের সন্ধান দাও। যাতে আমি ওই পুকুরে ডুব দিয়ে সুন্দর হতে পারি। মুখের দাগগুলো যায়, চুল বড় আর ঘন হয়, আর যাতে কমবয়স্ক লাগে সারাজীবন।’
চিঠিতে আরও লেখা রয়েছে, ‘আল্লাহ আমাদের সবাইকে বড় হজ করার ব্যবস্থা কইরা দিও। আমি আর আমার পাতিবাবু যাতে দুইবার অন্তত বড় হজ করতে পারি। আমি একটু সুন্দর হলেই কেউ না কেউ নজর দিয়ে দেয়। আল্লাহ এরকম যাতে আর না হয় দেইখো। আমি আর আমার পাতিবাবুকে সরকারি জব পাওয়াইয়া দিও। হালালভাবে যাতে চলতে পারি আমরা। আমার পাতিবাবুকে কয়েকদিনের ভিতরে সুস্থ কইরা দাও। আল্লাহ ডাক্তার বলছে ওর একটা মেডিসিন সারা বছর খাওয়া লাগবে। ওর যাতে সারাবছর খাওয়া না লাগে সে যাতে একবারে সুস্থ হয়ে যায় আল্লাহ তুমি দয়া কইরা দেইখো।’
মনের মানুষকে কাছে পাওয়ার অসমাপ্ত কাহিনি লেখা অন্য আরেকটি চিঠি পাওয়া যায়। এতে লেখা রয়েছে, ‘প্রিয় খাদিজা আক্তার লিপি, আজ এই ঐতিহাসিক মসজিদে তোমার নামে একটা মানত পূর্ণ করলাম। তুমি নেই তো কী হয়েছে তোমার দেওয়া স্মৃতি নিয়ে বাঁচবো আজীবন। আমার কী দোষ ছিল? তুমি একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখার পরও আমাকে নষ্ট করলে। আমি তোমাকে অভিশাপ দিব না। আমি আশা রাখি তুমি একসময় আমার হবে যদিও তুমি বাচ্চার মা হও আমার কোনো আফসোস থাকবে না।’
সৌদিয়ানকে বিয়ে করতে চিঠি দিয়েছেন এক নারী। তাতে লেখা রয়েছে, ‘আমি একজন সৌদিয়ানকে ভালোবাসি। হে মহান আল্লাহ, তুমি তাকে আমার করে দাও। আমি যেন তাকে বিবাহ করতে পারি (সুম্মা আমিন)।’
হে আল্লাহ যদি আমার ভালোবাসা সত্যি হয়, তাহলে আমার কলিজাটারে আমার কাছে ফিরিয়ে দিও। আর সব সময় তারে ভালো রেখো।
আল্লাহ তুমজ তানভীরকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে দাও।
আল্লাহ তুমি মহান, তুমি দয়ালু। তুমি আমাকে বাড়ি গাড়ি, ধন, টাকা সবই দান কর। সবাইকে সুস্থ রাখো। আল্লাহ আমার মেয়েদেরকে ভালো ভাবে লেখা পড়ার তাওফিক দান কর। ভালো চাকুরী এবং ভালো বর পাওয়াইয়া দেও। আল্লাহ তুমি আব্বুকে সৎপথে টাকা কামানোর পথ দেখাও। আমিন।
কিছু প্রতারক ছেলে আছে দেখতে তারা খুব ভদ্র, মানুষও জানে তারা ভদ্রলোক। কিন্তু তারা জঘন্যতম খারাপ।
ভালোবাসার অভিনয় করে মেয়েদের ব্যবহার করে। যৌনতা খোঁজে।
সৃষ্টিকর্তা আপনি তাদের যোগ্য শাস্তি দিবেন। এদের মতো ছেলেদের শিক্ষা হওয়া উচিৎ। আমার হৃদয় ভেঙে চুরমার। আমি বিচার দিলাম আপনার দরবারে।
আমি এক অসহায় মা পাগলা মসজিদে ইমাম সাহেবের নিকট বিনীত আরজ দয়া করে আমার ছেলেরা নামাজ পড়ে মা বাবাকেও খুব সম্মান করে। হুজুর দয়া করে শুক্রবার করে জুম্মার সময় দোয়া করবেন। যাতে দিনের পথে আসে। হুজুর আপনাকে জোর করে ছালাম জানিয়ে বলছি। দয়া করে এই অভাগা মায়ের সন্তানদের জন্য দোয়া করবেন। মসজিদের জন্য ৫০০ টাকা দান করলাম এক অসহায় মা।
আমি সহ সকল বোন যেনো মা ডাক শুনতে পারে আমার আল্লাহ যেনো এই তৌফিক দেই সবাইকে। মসজিদের ইমাম সহ সকল ভাই বোন আমার জন্য দোয়া করবেন এই চিরকুটটি দেখে। আমার আল্লাহ যেনো এই মাসে একটা সুখবর দেই আমাকে। আমার স্বামীর মনের আশা যেনো আল্লাহ পূরণ করে। ওযেনো বাবা ডাক শুনতে পারে। পাগলা মসজিদের উছিলায় আল্লাহ যেনো আমায় রহম করে। এই বার যেনো আমার আল্লাহ আল্লাহ আশা না ভাঙ্গে আমার। হে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) আমায় একটা সন্তান ভিক্ষা দাও। আমিন।
নরসিংদী জেলার মানিক নগর থেকে ফারজানা আক্তার ঋতু লিখেন,
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি কিন্তু ছেলেটা আমাকে ভালোবাসে না। আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যে আল্লাহ যেনো তাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে কবুল করে দেয়। ছেলেটার নাম আহাম্মেদ ইয়াছিন। আমার নাম ফারজানা আক্তার ঋতু। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেনো আমাদেরকে কবুল করেন। তাকে যেনো আল্লাহ আমার জন্য হালাল করে দেয়।
তামান্না নামের আরেকজন লিখেন, হে আল্লাহ তায়ালা আমি যানি আমার প্রিয় মানুষটারে নিজের করে পাই, আল্লাহ আমার আর আলামিন জোড় টা মাবুদ এক করে করে দিও।
আলামিন+তামান্না। মাবুদ আমার প্রিয় মানুষটা যানি খুব তাড়াতাড়ি ছলে আসে। আমাদের এক করে দাও।
আরেকজন লিখেন, আল্লাহ আপনি আমার প্রিয় শখের পুরুষ কে সব সময় ভালো রাইখেন। (ধংসবতী) প্রিয় সুহান।
আরেকজন লিখেন, আল্লাহ তাকে আমার করে দিও, নয় তো তাকে ভুলার ধৈর্য শক্তি দাও। নয় তো আমার মৃত্যু দাও। ছেলে মানুষ এত নিষ্ঠার কেনো। (JS+MAHMUD)
আরেকজন লিখেন, হে পরম করুনাময় আল্লাহ আপনার কাছে চাইলে তো সবি পাওয়া যায় যদি সেটা হালাল হয়। আল্লাহ আপনি আমার ভালোবাসাকে আমার পূর্ণতাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। আমার মনের আশা আপনি পূরণ করুন। আমিন।
আল্লাহ তোমার তাউহিদের কালিমা লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর উছিলা করে চাচ্ছি আল্লাহ তুমি তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। আমিন।
অসমাপ্ত কাহিনী নিয়ে আব্দুস সামাদ লিখেন, প্রিয় খাদিজা আক্তার লিপি আজ এই ঐতিহাসিক মসজিদে তোমার নামের একটা মানত পূর্ণ করলাম তুমি নেই তো কী হয়েছে তোমার দেয়া স্মৃতি নিয়ে বাঁচবো আজীবন।
আমার কী দোষ ছিলো, তুমি একটা হিন্দু ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখার পরও আমাকে এইভাবে নষ্ট করলে। আমি তোমাকে অভিশাপ দিবো না, তোমার হবিগঞ্জ শহর আমি অনেক দেখেছি কিন্তু তোমার মত কাউকে পেলাম না।
আমি আশা রাখি তুমি একসময় আমার হবে। যদিও তুমি বাচ্চার মা হও আমার কোনো আফসোস থাকবে না।
ইতি
তোমারই আব্দুস সামাদ।
আরেকজন ছেলে চিরকুটে লিখেন,
বরাবর আল্লাহ,
আল্লাহ আমি (M) তোমার এক বান্দীকে (T) আমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আল্লাহ আমি তাকে সাথে নিয়ে তোমার এবাদত করতে চাই। সে যদি আমার নসিবে থাকে তাহলে তোমার রহমত এর দ্বারা তাকে আমার সাথে মিলায়য়া দাও। সে যদি আমার নসিবে নাও থাকে তাহলে তুমি তাকে আমার নসিব করে দাও।
আল্লাহ তুমিতো সবার মন পড়তে পারো তুমি ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দাও। আল্লাহ তুমি তাকে আমার সহধর্মিণী করে দাও।
আল্লাহ তোমার পরে যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি তাহলে সেটা তাকে।
ইতি
তোমার বান্দা (M)
ঠিকানাঃ আমার কিশোরগঞ্জ সদর
তারঃ বাজিতপুর
ইয়াছমিউ মাইয়াশা
ইন্নাল্লাহ
এমন নানান ধরনের হাজার হাজার চিঠি এই পাগলা মসজিদের সিন্দুকে টাকার সাথে পাওয়া যায়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর