দেশে গত এক বছরে এইচআইভি বা এইডস রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নতুনভাবে ১,৪৩৮ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বিবাহিত, যা একটি উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান।
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী ও সংক্রমণের ধারা
সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যায়, পুরুষ সমকামীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি হিজড়া জনগোষ্ঠী এবং সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও সংক্রমণ বেড়েছে। পূর্বে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও নারী যৌনকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ অনেকটাই কমে এসেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই প্রবণতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
সংক্রমণের প্রভাবিত শ্রেণি ও বিভাগীয় চিত্র
আক্রান্তদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ পুরুষ, ২২ শতাংশ নারী এবং ১ শতাংশ হিজড়া। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৪০৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপরে চট্টগ্রামে ৩২৬ জন এবং খুলনা, রাজশাহীসহ অন্যান্য বিভাগে সংখ্যাটি তুলনামূলক কম।
বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যান
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছর এবং ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। এছাড়া নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা, যা কক্সবাজার অঞ্চলের জন্য বিশেষ উদ্বেগের কারণ।
স্বাস্থ্য সেবায় অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার বলেছেন, দেশে এইচআইভি পরীক্ষার সক্ষমতা বেড়েছে, যার ফলে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রমাণ নয়, বরং সচেতনতা ও চিকিৎসার আওতা বৃদ্ধির ইতিবাচক দিক।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুসংস্কার, ভয় ও লজ্জার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অনেকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন। তাদের চিকিৎসা সেবার আওতায় আনতে বিশেষ নজর দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য দূর করা না গেলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
বাংলাদেশে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৬৯ জনে। শুধুমাত্র সচেতনতা এবং কার্যকর কর্মসূচির মাধ্যমেই সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি রোধ সম্ভব। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ যত্ন ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ খবর
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এর সর্বশেষ খবর