আমার বয়স ১৭, আমার আব্বুর জেলে থাকার বয়সও ১৭ বলে নিজের দুঃখ প্রকাশ করেছেন একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে সাফাজ হুমাইরা।
রোববার (১ ডিসেম্বর) গ্রেনেড হামলা মামলার সব আসামি খালাস পেয়েছেন। এতে গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর আলমেরও মুক্তি হয়।
সাফাজ হুমাইরা বলেন, আমার বয়স যখন ৪ মাস, তখন আমি কথাও বলতে পারতাম না। আব্বুকে চিনতামও না। তখন থেকে আমার আব্বু নাই। আমি জন্মের পর থেকে বাসায় কখনো আব্বুকে দেখিনি।
খালাসের খবরে আনন্দ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন একবার জেলখানায় আব্বুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। এখন আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আজ আমি অনেক খুশি।
জাহাঙ্গীরের বোন দাবি করেন, তার ভাই ও বাবার নামের সঙ্গে অন্য আসামির নাম-পরিচয়ের মিল থাকায় তাকে ভুলভাবে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর এক মাস গুম করে রাখা হয়েছিল। তারপর তাকে পাওয়া গেলেও এতদিন যাবত এ মামলা চলমান ছিল।
প্রসঙ্গত, বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে রোববার খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে চার দিন আপিলের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য ছিল।
বিচারিক আদালত এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
আজকের রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার ছিল অবৈধ। আইনে এটা টেকে না। যে চার্জশিটের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত বিচার করেছিলেন তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না।
এর আগে বেলা ১১টায় রায় ঘোষণা শুরু হয়। ১১টা ৪৫ মিনিটে রায় পড়া শেষ হয়। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান।
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তারা এ মামলায় শুরু থেকেই আসামিপক্ষে শুনানি করেছেন। আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন খোকন, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
ওই বছরের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছায়।
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
আইন ও আদালত এর সর্বশেষ খবর