বরগুনায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা। যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে সেখানে যাত্রী নামানো এবং উচ্চ মাত্রার হর্ন বাজানোর কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ। রাস্তায় গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও স্বল্প পরিশ্রমে অধিক আয় করার জন্য অটোরিক্সা নিয়ে রাস্তায় নামেন যেকোনো মানুষ। হোক কৃষক কিংবা দিন মজুর। রাস্তায় তিন চাকার বাহন নিয়ে নামলেই যে টাকা আয় করা যায় সেই আশায় অটোরিক্সা নিয়ে বেড়িয়ে পরেন অনেকে। কোন প্রশিক্ষণ না থাকায় দিন দিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আবার যত্রতত্র পার্কিং কিংবা যেখানে সেখানে যাত্রী নামানোর কারণে সাধারণ মানুষ পরছে ভোগান্তিতে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও ভ্যান পৌরসভা অথবা সিটি করপোরেশনে চালানোর বৈধতা নেই। সড়ক অথবা মহাসড়কে এ ধরনের সব রিকশা বন্ধ করতে ২০১৪ সালে প্রথমবার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১৭ সালে এসব পরিবহণ বন্ধে আরেক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয় হাইকোর্ট থেকে। এরপর ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ থ্রি-হুইলার ও ইজিবাইক বন্ধ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে অটোরিকশার আমদানিও নিষিদ্ধ করা হয়। অথচ এসব যানকে দেওয়া হচ্ছে পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স। চলছে প্রয়োজনের তুলনায় তিন গুণ বেশি। রয়েছে অদক্ষ চালক। বরগুনা পৌর শহরে স্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র পার্কিংয়ে বাড়ছে যানজট।
প্রায় ১৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বরগুনা পৌরসভাটি। প্রায় ৫ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মিশুক ও ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এটি কাগজে-কলমের হিসাব। তবে বাস্তবে চলছে ১৫ হাজারের বেশি। এ পরিস্থিতি শুধু পৌর শহরেই নয়, জেলার উপজেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও একই অবস্থা।
পৌরসভার লাইসেন্স শাখার তথ্য অনুযায়ী পৌর শহরে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৯০টি। প্রতিটি নতুন লাইসেন্স ৪ হাজার ৫০ টাকা এবং নবায়ন ১ হাজার ৫৭০টাকা। মিশুক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯টি। নতুন লাইসেন্স ৪ হাজার ৫০ টাকা এবং নবায়ন ২ হাজার ৫৫০ টাকা। ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে ৪০০। এসব গাড়ি পৌরসভা এলাকায় চালানোর জন্য প্রতিদিন ১০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষকে। মাসিক ৩০০ টাকা।
অপর দিকে বিদ্যুৎ খাতে ঘাটতির একমাত্র কারণ ‘অটোরিক্সা’ এমন দাবী করছে সমাজের সচেতন মহল। পৌর কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় শহরের শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী তাদের।
রাস্তার দুই পাশে পার্কিং করে রাখা অবৈধ অটোরিক্সা। কোন প্রকার সতর্কতা সংকেত না দিয়েই এভাবেই চলাচল করে। যার কারণে সড়কের দুর্ঘটনা বাড়ছে দিন দিন। নিতে হয় না কোন প্রশিক্ষণ, লাগে না ড্রাইভিং লাইসেন্স। শুধু পৌরসভায় প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয়। সেই সংখ্যাও খুবই কম।
রাফী বলেন, শহরে হাঁটার মতো জায়গা নেই, পা ফেললেই অটোরিকশা। শহরের জায়গা অনুসারে, যে রিকশা দরকার সেই কয়টি পৌরসভার লাইসেন্সের আওতায় এনে বাকিদের শহরের বাহিরে চালানোর জন্য বলা উচিত। অবৈধ অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রিত দেখতে চাই।
শহরের প্রধান সড়কগুলো অটোরিক্সার দখলে থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের বাইরে পার্কিং ব্যবস্থা করা হলে হয়ত ভোগান্তি কমবে বলে দাবী জন সাধারণের। একটা সুশৃঙ্খল শহরের স্বপ্ন দেখে এই শহরের বাসিন্দারা।
পৌরসভার নাগরিক আল আমীন বলেন, অটোরিক্সার যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ। ছোট্ট একটা শহর তবে শহরের তুলনায় অটোরিকশা অনেক। অনেকে জীবিকার তাগিদে গাড়ি চালাচ্ছেন ঠিক তবে মানছে না কোন নিয়মকানুন। তাই রিকশার পরিধি কমিয়ে আনা উচিত।
এই অবৈধ অটোরিক্সার চালানোর একমাত্র জ্বালানি বিদ্যুৎ। এ কারণে বিদ্যুৎ খাত ঘাটতির মুখে। গ্যারেজে চার্জ দিতে বাণিজ্যিক মিটারের পাশাপাশি থাকে আবাসিক মিটার। গ্যারেজ পরিচালনায় নেই কোন নিয়ম নীতি।
রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন পৌরসভার লঞ্চঘাট আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার লাইসেন্স নিয়ে শহরে গাড়ি চালান। কিন্তু বিভিন্ন গ্রাম থেকে লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা, মিশুক ও ইজিবাইক শহরে ঢুকে যানজট সৃষ্টি করে। তাদের প্রতিরোধ ও নির্দিষ্টসংখ্যক গাড়ি চলার সুযোগ দিলে সমস্যা অনেকটা সমাধান হবে।
ইজিবাইক কমিটির লঞ্চঘাট স্ট্যান্ড পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মো. খোকন মিয়া বলেন, তাঁরা জানেন ইজিবাইক শহরে চালানোর বৈধতা নেই। মানবিক কারণে প্রশাসন তাঁদের সুযোগ দেয়। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় রাস্তায় পার্ক করতে হচ্ছে।
ধরিত্রীর রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশ বরগুনা শাখার সমন্বয়ক মুশফিক আরিফ বলেন, ছোট এ জেলা শহরে নিয়ন্ত্রণহীন ও অপ্রতিরোধ্য গতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো ও ইজিবাইক চলছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে এর চাপ পড়বে বিদ্যুতের উপরে। যে যার খুশিমতো তৈরি করছে এবং চালাচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের দরকার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আঃ হালিম বলেন, সড়ক পরিবহণ আইনে ব্যাটারিচালিত রিকশা অথবা ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও নাগরিক চলাচলে প্রয়োজনীয়তা থাকায় সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে শহরে যেন অতিরিক্ত যানজট সৃষ্টি করতে না পারে তা যানজট নিরসনে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সকলের সাথে মিটিং করে জানানো হবে কে কোথায় কতটুকু চলাচল করতে পারবে। পরবর্তীতে এর ব্যাপ্তি হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরগুনা পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপ পরিচালক মোঃ তানজিম বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শহরের যানজট নিরসনে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যত্রতত্র গাড়ি ঘুরানো বন্ধ করতে ইতোমধ্যে সড়কে রশি টানানো হয়েছে। এছাড়াও লাইসেন্সবিহীন কেউ যেন গাড়ি চালাতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পৌরসভার লাইসেন্স প্রাপ্ত গাড়ি আমরা আলাদাভাবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর