
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা শান্তিচুক্তির ২৭ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্য মূলক ধারা গুলো সংশোধন করে চুক্তির পূনঃমূল্যায়ন করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ির এফএনএফ রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হোসেন। এসময় নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডালিম, মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমা আক্তার মৌ, জেলা কমিটির সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুম রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মোক্তাদের হোসেন, যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আসাদ উল্লাহ প্রমুখ সহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হোসেন বলেন, 'প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে তৎকালীন শান্তি বাহিনী রক্তের হোলি খেলায় মেতে ছিল। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে পার্বত্য চুক্তি হয়। পার্বত্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হাতে শান্তি বাহিনীর শীর্ষ গেরিলা নেতা সন্তু লারমা তার নামে মাত্র কিছু সংখ্যক সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। সরকার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ প্রদান করে। আশা ছিল পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে কিন্তু বাস্তবে ঘটছে এর উলটো। এখন ৫টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে চলছে অস্ত্রের মহড়া, মহা উৎসবে চলছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।'
তিনি বলেন, 'চুক্তি অনুযায়ী বিগত সরকার ইতোমধ্যে অধিকাংশ ধারা এরই মধ্যে বাস্তবায়িত করেছে। আর অবশিষ্ট কিছু ধারা বাস্তবায়নাধীন। পার্বত্য চুক্তির বিভিন্ন ধারা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। এই রিটের রায়ে উচ্চ আদালত পার্বত্য চুক্তির অনেকগুলো ধারা অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দিয়েছে। যদিও উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিলে তা আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। পার্বত্য চুক্তির আওতায় গঠিত ভূমি কমিশন আইন দেওয়া হয়েছে। মামলাটিতে বিশেষজ্ঞরা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, কর্তৃত্ব ও রাষ্ট্রের এখতিয়ার বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবিধান সময় ও প্রয়োজনের দাবিতে সংশোধিত ও পরিবর্তিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানও ১৬ বার সংশোধিত হয়েছে। কোনো চুক্তি বা আইন তো আর সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান পেতে পারে না। কেননা, আইন ও চুক্তি হয়ে থাকে সংবিধানের আওতায়। সে কারণে পার্বত্য চুক্তিতে সংবিধান বহির্ভূত বা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারাগুলো বাদ দিতে হবে। সাংঘর্ষিক ধারা বাদ দিয়ে পার্বত্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। তাই সংবিধান, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও নাগরিকের প্রতি বৈষম্যমূলক যেসব ধারা, উপধারা দশ্যমান হবে তা সংশোধন করতে হবে।'
সংবাদ সম্মেলন থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে বাংলাদেশের সংবিধানের সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন পূর্বক চুক্তির পূনঃমূল্যায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপনে ব্যর্থ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমার অপসারণ, পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যাহারকৃত নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের জোর দাবি জানানো হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর