মসজিদ এর মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। ভুমি দাতাদের স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য এই বিরোধের সূত্রপাত হয়। এনিয়ে মসজিদের ভুমি দাতা পক্ষ আদালতে মামলা করেছেন। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের পুরাতন প্রথমে বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা জামে মসজিদ এখন হুমকির মুখে। নাম পরিবর্তন করতে না পারেন সেই জন্য আদালতে মামলা করা হয়েছে।
এনিয়ে এলাকায় বড় ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেকের ধারণা এখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মামলা পাল্টা মামলার জন্য বিপাকে পড়েছেন এলাকার সাধারণ মুসল্লিরা। তারা কোথায় নামাজ আদায় করবেন সেটি নিয়ে রয়েছে নানা সংশয় ও দ্বন্দ্ব। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নজর দেয়াড় জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আর ভুমিদাতারা ৫০ বছরের এই মসজিদ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
মামলার বিবরণে জানাগেছে, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা গ্রামের নিম্ন তফশিল বর্ণিত মসজিদের নাম বিবাদীগণ যাহাতে কোন ভাবেই পরিবর্তন করিতে না পারেন তদমর্মে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞারর প্রার্থনায় বাদী মোকদ্দমা দায়ের করেন মোঃ লতিফুর রহমান তিনি বলেন, তার পিতা মোহাম্মদ আলী ( মাহমুদ আলী ) ও রিয়াজ উদ্দিন (আমেরিকা প্রবাসী ) শেখ নিদাই নামের বিরোধিতা কারী।তিনি দলিল নং ৭৮০/২২ ইং তারিখ ২৩/০২/২০২২ ইং জমি মসজিদে দান করেন।ডাক্তার রেজাউল করিম চৌধুরী গং দলিল নং ১৪০৬/২২ ইং তারিখ ২৯/০৩/২০২২ ইং ০.২২৬৪ শতক জমি মসজিদে দান করেন। তাহারা ও শেখ নিদাই নাম করণের বিপক্ষে।
এছাড়া মামলার বিবরণে জানা গেছে, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানাধীন বাদেপাশা গ্রামে বসবাস করাকালীন অবস্থায় মহল্লার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণের নামাজের কোন সু- ব্যবস্থা না থাকায় বাদেপা উত্তরহাটির মুসল্লিয়ানগণের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণ করার জন্য তিনি তাহার মৌরসি সম্পত্তি হইতে বিগত ১৩৮৪ বাংলার ১২ই আষাঢ় মোতাবেক ২৭/০৬/১৯৭৭ ইংরেজি তারিখে সম্পাদিত ৪৬৫০/১৯৭৭ইং নম্বর ওয়াকফনামা দলিল মূলে “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ” এর মোতাওয়াল্লি বরাবরে এস.এ. ১১৭ ও ২৫৩ খতিয়ানের এস.এ. ৯২ দাগে ০.০৪ একর ভূমি দান করেন । ৪। তৎপর হইতে তথায় “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ” নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করিয়া ইমাম সাহেব নিয়োগ ক্রমে গ্রামের সকলেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথারীতি আদায় করিতে থাকেন। উক্ত “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ” নির্মাণের পর ক্রমে ক্রমে মুসল্লি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এলাকার মুসল্লিগণের নামাজ আদায় করার সুবিধার্থে “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ”এর ইমাম সাহেবের সম্মানী সহ
আনুষঙ্গিক খরচাপাতি বৃদ্ধি পায়। এসব সার্বিক দিক বিবেচনা ক্রমে সকল মুসল্লিগনের সহিত পরামর্শ করিয়া বাদী মোঃ লতিফুর রহমান গং যৌথ ভাবে বিগত ২৯/০৩/২০২২ইং তারিখে ১৪০৬/২০২২ইং নম্বর দলিল মূলে বি.এস. ১২২০ খতিয়ানের বি.এস. ৫১৮০ দাগে ০.২২৬৪ একর ভূমি “বাদেপাশা জামে মসজিদ” এর নাম বরাবরে হস্তান্তর করেন। অনুরূপ ভাবে বিগত ১৯/০৭/২০২৩ ইংরেজি তারিখে সম্পাদিত অত্র মোকদ্দমার বাদী মোঃ লতিফুর রহমান এবং ওবায়দুর রহমান যৌথ ভাবে ২৪৮৫/২০২৩ইং নম্বর সাফ কবালা দলিল মূলে বি.এস. ৩৭৯ খতিয়ানের ২৭ দাগে ০.০০৮৫ একর ভূমি “বাদেপাশা জামে মসজিদ” বরাবরে হস্তান্তর করেন।
উক্ত দলিলের গর্ভে সুষ্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে যে, “উক্ত বর্ণিত মসজিদের দাতা পরিবারের সদস্যদের লিখিত অনুমতি ব্যতীত বর্ণিত মসজিদের নাম পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন করিতে পারিবেন না। আরো প্রকাশ থাকে যে, ইতিপূর্বে বর্ণিত মসজিদে বিনা দলিলে দাতাগণের যে সম্পত্তি মসজিদের অনুকূলে দান করা হইয়াছে এবং তাহা বি.এস. জরিপে মসজিদের নামে রেকর্ড হইয়াছে তাহাতে দাতাগণের কোন দাবী দাওয়া নাই তাহা দাতাগণেনর দান বলিয়া গণ্য হইবে”।
বাদী সহ অপরাপর ব্যক্তিগণ কর্তৃক “বাদেপাশা জামে মসজিদ” নামে দানকৃত ভূমির যে অংশে মসজিদ নির্মিত হইয়া এলাকার মুসল্লিগন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিয়া আসিতেছেন সেই ভূমি বি.এস. জরিপে গোলাপঞ্জ থানাধীন বাদেপাশা মৌজার ৩০০ খতিয়ানের অন্তর্গত বি.এস. ২৪ নং দাগ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে চূড়ান্ত বি.এস. খতিয়ান প্রচার ও প্রকাশিত হইয়াছে। বর্ণিত বি.এস. ৩০০ খতিয়ানের মালিকানা কলামে সুষ্পষ্ট ভাবে “দং বাদেপাশা জামে মসজিদ কমিটি পক্ষে সেক্রেটারী” লিখা রহিয়াছে। অত্র মোকদ্দমার বাদী একজন বয়স্ক লোক এবং তাহার পুত্র সন্তানগণ প্রবাসে থাকেন। এই সুযোগে কিছু ব্যক্তি এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য মসজিদকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের পুরাতন প্রথমে বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা জামে মসজিদ।
উপর্যুক্ত বাদী নিম্ন লিখিত রূপ বর্ণনা করেন , জেলা সিলেট, থানা ও উপজেলা-গোলাপগঞ্জ, মৌজা বাদেপাশা স্থিত নিম্ন তফশিল বর্ণিত মসজিদের নাম বিবাদীগণ যাহাতে কোন ভাবেই পরিবর্তন করিতে না পারেন তদমর্মে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞারর প্রার্থনায় বাদী অত্র মোকদ্দমা দায়ের করিলেন । ২। আদালতের এলাকা কোর্ট ফির পরিমাপ নির্ণয়ের জন্য যেহেতু ইহা একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মোকদ্দমা বিধায় ইহার কোন অভিযোগ না থাকায় স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার উপকারের মূল্য ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা ধার্য্যে তাহার উপর এডভেলোরেম কোর্ট ফি প্রদানে অত্র মোকদ্দমা দায়ের করা হয়।
বাদীর পিতা মোহাম্মদ আলী (মাহমুদ আলী ) সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানাধীন বাদেপাশা গ্রামে বসবাস করাকালীন অবস্থায় মহল্লার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণের নামাজের কোন সু- ব্যবস্থা না থাকায় বাদে পাশা উত্তরহাটির মুসল্লিয়ানগণের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে একটি পাঞ্জেগানা মসজিদ নির্মাণ করার জন্য তিনি তাহার মৌরসি সম্পত্তি হইতে বিগত ১৩৮৪ বাংলার ১২ই আষাঢ় মোতাবেক ২৭/০৬/১৯৭৭ ইংরেজি তারিখে সম্পাদিত ৪৬৫০/১৯৭৭ইং নম্বর ওয়াকফনামা দলিল মূলে “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ” এর মোতাওয়াল্লি বরাবরে এস.এ. ১১৭ ও ২৫৩ খতিয়ানের এস.এ. ৯২ দাগে ০.০৪ একর ভূমি দান করেন। ৪। তৎপর হইতে তথায় “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ” নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করিয়া ইমাম সাহেব নিয়োগ ক্রমে গ্রামের সকলেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথারীতি আদায় করিতে থাকেন। উক্ত “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ” নির্মাণের পর ক্রমে ক্রমে মুসল্লি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এলাকার মুসল্লিগণের নামাজ আদায় করার সুবিধার্থে “বাদেপাশা উত্তরহাটি পাঞ্জেগানা মসজিদ”এর ইমাম সাহেবের সম্মানী সহ মসজিদ নামে এবং পরবর্তীতে"বাদেপাশা জামে মসজিদ” এর নাম পরিবর্তন করার জন্য বিভিন্ন প্রকার অপকৌশলে লিপ্ত হন। বিবাদীগণ মসজিদ পরিচালনা কমিটির নামে মসজিদের ভূমি দাতাসহ এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগনের মতামতের প্রতি কোন তোয়াক্কা না করিয়া জোর পূর্বক চলতি ২০২৪ইং সনের ফেব্রুয়ারি মাসের ১ম দিকে বিবাদীগনের সহযোগীতায় “বাদেপাশা জামে মসজিদ” এর নাম পরিবর্তন ক্রমে “বাদেপাশা শেখ নিদাই জামে মসজিদ” নাম লিখিয়া মসজিদের গেইটে সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টা করেন। সচেতন মুসল্লি ও বাদীগণের নিকটাত্মীয়দের প্রবল আপত্তির মুখে বিবাদীগণ মসজিদের নতুন নাম সংবলিত সাইনবোর্ড লাগাতে ব্যর্থ হয়। বাদীর প্রবাসী পুত্র মোঃ মোবার আহমেদ উক্ত সংবাদ পাওয়ার পর তিনি দেশে আসিয়া বিবাদীগণকে “বাদেপাশা জামে মসজিদ” এর নাম পরিবর্তন করার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে তাহারা জানান যে, শেখ নিদাই'র নামে মসজিদ নামকরণ করিলে শেখ নিদাই পরিবার খুশী হবে এবং মসজিদে তাহারা অধিক পরিমাণে দান করিবেন। বিবাদীগণের এমন কথায় বাদীর পুত্র মোবার আহমেদ হতভম্ভ হইয়া পড়েন এমন সাথে সাথে বাদীকে ঘটনা জানালে বাদী বিগত ০৩/০৫/২০২৪ইং তারিখে ১নং বিবাদীকে তলব করিয়া নাম পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে ১নং বিবাদী কোন সদুত্তর না দিয়ে মসজিদ পরিচালনার কমিটির দোহাই দিয়ে বলেন, ইহা আমার একার বিষয় নহে, মসজিদ কমিটির বিষয়। বাদী তাহার দানকৃত দলিলে উল্লিখিত নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে ১নং বিবাদী কোন সদুত্তুর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন ৷ ৭। এমতাবস্থায় বিবাদীগন তফশিল বর্ণিত মসজিদের নাম অর্থাৎ “বাদেপাশা জামে মসজিদ” এর নাম পরিবর্তন করার উদ্যোগ গ্রহণ বেআইনি, অবৈধ ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত বটে। বিবাদীগণ কর্তৃক তফশিল বর্ণিত মসজিদের নাম পরিবর্তন করিলে বাদী কর্তৃক ভূমি দানের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হইবে এবং স্থানীয় ভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হইবে। তাই মাননীয় আদালতের নির্দেশে তফশিল বর্ণিত মসজিদের নাম পরিবর্তন না করার জন্য স্থায়ী আদেশ হওয়া হওয়া একান্ত আবশ্যক।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর