
মৃত্যুর ১০ বছর পরেও প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়নি বাসচাপায় নিহত হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান টিটুর পরিবার। এমনকি বিভিন্ন সময় তৎকালীন প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। সে সময়ে বিরোধী দল (বিএনপি) সাথে জড়িত থাকায় ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত ও হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন টিটুর পরিবার।
পরিবারটির অভিযোগ, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ক্যাম্পাসের ভাড়া বাস চাপায় নিহত হয়। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য দ্বারস্থ হয়। পরে প্রশাসন নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ টিটুর পরিবারের এক সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ও টিটুর নামে একটি ভবনের একটি নামকরণের আশ্বাস দেয়। পরে এ বিষয়ে একটি অঙ্গীকারনামাও করা হয়। তবে আশ্বাসের এক দশক পরও প্রতিশ্রুত সহযোগিতা পায়নি নিহতের পরিবার।
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে এসব কথা জানান নিহতের ছোট ভাই তারেক আজিজ। সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে, বিগত দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলেও কোন লাভ তো হয়নি বরং হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। পরিবারটি বিরোধী দলের (বিএনপি) সাথে জড়িত থাকায় প্রতিশ্রুত সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে অভিযোগ তাদের। তবে ২০১৬ সালে তার বোন আফরোজা আক্তার লাকিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে থোক বরাদ্দে (চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী চাকুরী) নিযুক্ত করে তৎকালীন প্রশাসন। পরে তার চাকুরি স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দেয় প্রশাসন। তবে চাকরিতে যোগদানের আট বছর পার হলেও এ চাকুরি স্থায়ী করা হয়নি। এমনকি ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানায় নিহতের পরিবার।
নিহতের পরিবার জানায়, টিটুর ছোট পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দুই বোনের বিবাহ হয়েছে ও ছোট ভাই সদ্য স্নাতক শেষ করেছেন। টিটুর বয়স্ক বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর এখন তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে ফেলেছেন। বর্তমানে পরিবারটির হাল ধরার মতো কেউ নেই। তাই এসব দিক বিবেচনা করে বর্তমান প্রশাসনের কাছে প্রতিশ্রুত সহযোগিতা ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে পরিবারটি।
টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমার অনেক আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও কোন ক্ষতিপূরণ পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমরা তিনটি দাবি জানাতে চাই। দাবিগুলো হলো, অনতিবিলম্বে টিটুর বোনের চাকরির স্থায়ীকরণ করতে হবে, তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন ভবনের নামকরণ করতে হবে এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়ায় চালিত ঝিনাইদহগামী বাসে উঠার চেষ্টা করেন। এসময় বাসচালক হঠাৎ দ্রুত বাস চালালে সে উঠতে ব্যর্থ হয় ও মাটিতে পড়ে যান। এ সময় পেছন থেকে ভাড়ায় চালিত অপর একটি বাস (সাগর পরিবহণ) দ্রুতবেগে তার গলার উপর দিয়ে পিষ্ট হয়। এতে তার গলা ছিঁড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন টিটু। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসসহ প্রায় ৪০টি বাস পুড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধে। এতে ৩০ জনের অধিক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘটনার পর টানা চার মাস ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিগত সময়ের প্রশাসন কি ধরনের আশ্বাস দিয়েছে সেটা তো এই প্রশাসনের জানা নেই। তবে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার যদি প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা কামনা করে তাহলে আমরা তাদের সাথে আলোচনায় বসব এবং বিবেচনাপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর