
পতিত ফ্যাসিবাদের বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে সকল ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
বুধবার দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এই সভা হয়। সভায় সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে হামলা, ফ্যাসিবাদ দমনে ঐক্য ও ইকসু গঠন নিয়ে আলোচনা হয়।
এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়ার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে শাখা ছাত্র ইউনিয়নকে আমন্ত্রণ জানানো হলে সভায় আসেনি সংগঠনটির কোনো নেতাকর্মী। সংগঠনটির না আসার কারণে ক্যাম্পাসে বিভাজনের রাজনীতির সূচনা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইবি শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, শিবিরের আয়োজিত কোন প্রোগ্রামে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ অংশ নেবে না। কেন্দ্রীয় সংগঠনের নীতিগত সিদ্ধান্তের ফলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্য কারো আয়োজিত প্রোগ্রামেও যদি শিবির থাকে সেখানে আমরা অংশ নেব না। এক কথায় শিবির যেখানে থাকবে আমরা সেখানে থাকব না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজিত যে কোন বৈঠকে শিবির থাকলেও আমরা অংশ নিতে করতে রাজি। যেহেতু আমাদেরকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সেখানে মতামত পেশ করতে হবে।
ছাত্রশিবিরের বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় অবস্থান জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, যেহেতু ছাত্রশিবির তাদের অতীতের ভুলগুলো নিয়ে এখনও স্পষ্ট ও ক্ষমা চাইনি সেহেতু তাদের সাথে আমাদের কোন রাজনৈতিক সহাবস্থান থাকবে না। ছাত্র ইউনিয়ন আদর্শিক দিক থেকে তাদের সাথে থাকবে না। তবে প্রশাসনিক মিটিংগুলোতে শিবিরের উপস্থিতিতেও সেখানে থাকতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। কারণ এটি প্রশাসনের নিজস্ব সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে এটি এড়ানোর সুযোগ নেই। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বার্থে মতামত উপস্থাপন করতে হলে আমাদের সেখানে থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে প্রশাসনের কাছে দাবি তারা যেন শিবিরের উপস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিবিরের সাথে একত্রে আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিবিরকে আমরা প্রকাশ্যে আন্দোলন করতে দেখেনি। তবে তারা আন্দোলন করলেও করতে পারে। তারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছাত্রলীগের ভিতরে লুকিয়ে ছিল বলে আমরা জানি। ছাত্র ইউনিয়ন সাংগঠননিকভাবে আন্দোলনে যুক্ত ছিল।
সভা শেষে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নকে দেশ ও জাতির প্রশ্নে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি এইচ এম আবু মুসা বলেন, ছাত্রশিবির সবসময় সবার উদার মন-মানসিকতা পোষণ করে। আমরা রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। আমরা কোন মতনৈক্য চাই না। আমরা সকলের সাথে চলতে চাই থাকতে চাই; শুধু ফ্যাসিবাদের দোসরদের ছাড়া। আমরা অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর ক্ষেত্রে এমনটাই আশা করি যে তারাও রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী হবে। শিক্ষার্থীদের স¦ার্থে সকল কাজে ছাত্রশিবির সকল সংগঠনের সাথে থাকতে একমত।
সভায় ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ছাত্রদের যেকোনো সমস্যায় ছাত্রদল অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে। এখনও যেসব ফ্যাসিবাদের দোসর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে আছে তাদেরকে আমরা আর সেসব পদে দেখতে চাই না। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাসিস্টদের দোসরদের বিরুদ্ধে মামলা করবো। আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কোনোভাবেই এদেশে আর কখনোই মাথাচাড়া দেওয়ার সুযোগ দেব না।
এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেমন সবাই একসঙ্গে ছিলাম ভবিষ্যতেও দেশের স্বার্থে সবাই এক থাকবো। পতিত ফ্যাসিবাদকে আমরা কোনোভাবেই প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেব না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া সকল সংগঠনের সাথে নিয়ে আমরা চলতে চাই; আমরা বিভাজন চাই না। কারণ বিভাজনের ফায়দাটি ফ্যাসিবাদিরাই নিবে। ছাত্র ইউনিয়নসহ সকল সংগঠনকে এক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এরপরও যদি কোন সংগঠন আমাদের প্রোগ্রামে আসলে কেউ অংশ না নেয় তাহলে তাতে আমাদের কিছু করার নেই। তবে এটি খুবই দুঃখজনক।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর