মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাদের বানিয়েছেন সৃষ্টির সেরা। দিয়েছেন সবচেয়ে সুন্দর অবয়ব। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে। (সুরা তিন: ০৪)
মানুষকে মহান আল্লাহ সত্য ও কল্যাণ বুঝে গ্রহণ করার সামর্থ্য দান করেছেন। অসত্য ও অকল্যাণ প্রত্যাখ্যান করার সামর্থ্য দান করেছেন। মানুষ যখন নিজের বিবেক, চিন্তা ও পর্যবেক্ষণ শক্তি কাজে লাগায় এবং সত্য গ্রহণ করে, তখন মানুষ হয় সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে মহান আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন।
আর মানুষ যখন নিজের চিন্তাশক্তি কাজে না লাগিয়ে; মহান আল্লাহর দেয়া চোখ, কান ও অন্তর পেয়েও অন্ধ ও বধির হয়ে থাকে-- তখন মানুষ হয় সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও রহমত বঞ্চিত হয়। মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট তো বটেই, চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কারণ মহান আল্লাহর নেয়ামত পেয়েও সে সেগুলোর মূল্যায়ন করতে পারে নি।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,
وَلَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَهَنَّمَ كَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ لَهُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَهُوۡنَ بِهَا۫ وَ لَهُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِهَا وَ لَهُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِهَا اُولٰٓئِكَ كَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ
অর্থ: আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, তা দ্বারা তারা বোঝে না; তাদের রয়েছে চোখ, তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, তা দ্বারা তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। তারাই হচ্ছে গাফেল। (সুরা আরাফ: ১৭৯)
আরেকটি আয়াতে এ ধরনের ব্যক্তিদের সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ لَا تَوَلَّوۡا عَنۡهُ وَ اَنۡتُمۡ تَسۡمَعُوۡنَ وَ لَا تَكُوۡنُوۡا كَالَّذِیۡنَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ هُمۡ لَا یَسۡمَعُوۡنَ اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰهِ الصُّمُّ الۡبُكۡمُ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡقِلُوۡنَ
অর্থ: হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য কর এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না, অথচ তোমরা শুনছ। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শোনে না। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম বিচরণশীল প্রাণী হচ্ছে বধির, বোবা, যারা বোঝে না। (সুরা আনফাল: ২২)
অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে সেসব মানুষই সবচেয়ে নিকৃষ্ট যারা সত্য ও ন্যায় শ্রবণের ব্যাপারে বধির এবং তা গ্রহণ করার ব্যাপারে বোবা হয়ে থাকে। কারণ আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সত্য জানা ও সে পথে চলার জন্য চোখ ও কান দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেগুলো কাজে লাগায়নি।
হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
তিন ব্যক্তি এমন রয়েছে যে, মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন ওই সব ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না, বরং তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন। নবিজি তিনবার এটা বললেন। আবু জর (রা.) বললেন, তাহলে তো এসব ব্যক্তি অকৃতকার্য হলো এবং ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল। হে আল্লাহর রসুল! এসব ব্যক্তি কারা? তখন নবিজি বললেন, যারা নিজেদের লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে, যারা অনুগ্রহ করে খোটা দেয় এবং যারা মিথ্যা কসম খেয়ে নিজেদের মাল বিক্রি করে।’ (মুসলিম: ২৯৩)
শাকিল/সাএ
সর্বশেষ খবর