শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা দিকে ময়মনসিংহ নগরীর নওমহল এলাকার সারদা ঘোষ রোড সংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবন টাওয়ার বিল্ডিং নং-৪৩-এর ৩য় তলায় একজন যুবকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে সংবাদে কোতোয়ালী থানার ৩নং ফাঁড়ির ইনচার্জ, ওসি কোতোয়ালী মডেল থানা, জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ও জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ জানায়, ভবনের নির্মাণ শ্রমিকদের ফোরম্যান ছিলেন রমজান আলী (২৪), রমজান আলী নীলফামারী জেলার জলঢাকা থানার পূর্ব বনগ্রাম কাশিনাথপুর এলাকার মো. রশিদুল ইসলাম এর ছেলে। রমজান আলীর মৃতদেহ তার নিজ শয়নকক্ষে পাওয়া যায় এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, তার মাথায় ভারী ভোতা বস্তু দ্বারা উপর্যুপরি আঘাতে তার মুখমণ্ডল ও মস্তকের ডান অংশ পুরোপুরি বিকৃত অবস্থায় রয়েছে। ঘটনাটি তৎক্ষণাৎ সমগ্র ময়মনসিংহ শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
সংবাদের সাথে সাথে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা গোয়েন্দা শাখা ও কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও হত্যাকারীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে কার্যক্রম শুরু করে।
ভবনের অপরাপর নির্মাণ শ্রমিকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ফোরম্যান হিসেবে দায়িত্বপালনকালে মৃত রমজান আলীর কাছে কতিপয় নির্মাণ শ্রমিকের মজুরি পাওনা ছিল। সেই আলোকে ঘটনাস্থল থেকে জব্দকৃত ভিকটিমের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং ভবনের প্রবেশপথে স্থাপিত একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নির্মাণাধীন ভবনে রডমিস্ত্রি হিসেবে কর্মরত মো. আমিনুর ইসলাম (২৫)-কে সন্দিগ্ধ হিসেবে শনাক্ত করেন।
পরবর্তীতে জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি ও কোতোয়ালী থানা পুলিশ একটি যৌথ অভিযানিক দল শনিবার সকাল ৭ দিকে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটনকারী আমিনুর ইসলামকে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন শাহপ্রতাপ মোড় এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আমিনুর জানায় যে, গত অক্টোবর মাসে সে রংপুর থেকে ময়মনসিংহে এসে উক্ত ভবনে রডমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য তার শ্বশুর ও চাচা শ্বশুরকে সে সাথে নিয়ে আসে। প্রথম দুই সপ্তাহ তাদেরকে নিয়মিত পারিশ্রমিক প্রদান করা হলেও বিগত প্রায় দেড়মাস যাবৎ তারা নিয়মিত পারিশ্রমিক পেত না।
একপর্যায়ে তার শ্বশুর ও চাচা শ্বশুর পারিশ্রমিক না নিয়েই গ্রামের বাড়ি ফিরে যায় এবং গ্রামের আত্মীয় স্বজনের কাছে আমিনুরের সম্মানহানি হয়। এই ধারাবাহিকতায় গতকাল সাড়ে বারটায় মৃত রমজানের সাথে আমিনুরের তীব্র বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে রমজান তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করলে আমিনুর উত্তেজিত হয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা ভারী লোহার রড দ্বারা রমজানের মাথায় সজোরে উপর্যুপরি আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে প্রথমে ঢাকা এরপর নারায়ণগঞ্জ এবং অবশেষে নরসিংদী গমন করে।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে একটি প্রেস ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। পুলিশ সুপারের পক্ষে ব্রিফিং এ বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশিদ।
এসময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শহিদুল ইসলাম, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান, ওসি তদন্ত সাইফুল ইসলাম ও সেকেন্ড অফিসার এস আই আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা লোহার রড জব্দ করে পুলিশ। আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর