সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ঈশ্বরদীতে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার চাষিরা সরকার নির্ধারিত দামে সার কিনতে পারছেন না বলে জানা গেছে। চাষিদের মধ্যে সার সরবরাহ না করে ডিলাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে অধিক দামে সার বিক্রি করছেন বলে এমন অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
ফলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দামে কৃষকদের সার কিনতে হচ্ছে। সার বিক্রয়ে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কারণে চাহিদামতো সার পাওয়া যাচ্ছেন না।
দাশুরিয়ার মারমী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হায়দার আলী ঈশ্বরদী বাজার থেকে টিএসপি ৪০ টাকা, ডিএপি ৩০ টাকা, ইউরিয়া ৪০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। শহরের বাজারে যে টিএসপি/ডিএপি ৫০ কেজির ১ বস্তা ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নে বস্তা প্রতি দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারণে একই সার একেক জায়গায় একেক দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কৃষকরা অভিযোগ করে জানান, প্রতি বস্তা সার ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ১,৪০০ টাকার বাংলা ড্যাপ এখন ২,২০০-২,৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিএডিসি ড্যাপ ১,৩০০ টাকায়, টিএসপি (মরক্কো) ১,৫০০ এবং বাংলা পতেঙ্গা ২,৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সারের দাম বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে পরিবেশকরা সরবরাহে ঘাটতির কথা জানিয়েছেন। তবে কৃষকরা বলছেন কারসাজি করে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে ।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের সরকার নির্ধারিত বিক্রয়মূল্য ২৭ টাকা, টিএসপির (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপির কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নে ৩০-৪০ টাকা কেজির নিচে কোনো সার পাওয়া যায় না।
ঈশ্বরদীতে চলতি বছর অক্টোবর থেকে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয়েছে। শীতকালীন সবজি চাষও মামা ব্যাপকভাবে চলছে। প্রতিবছর এ সময় সারের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুত করে তারা দাম বাড়িয়ে দেন। সারের দামের পাশাপাশি পেঁয়াজ ও রসুনের বীজের দামও বাড়তি বলে জানা গেছে।
বক্তারপুর এলাকার চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, সারের দাম বাড়ায় ফসল আবাদ করতে খরচ আরও বেড়ে যাবে। কৃষক হাসান আলী বলেন, খবরে শুনি, সার আসছে, কিন্তু পরিবেশকরা বলছেন সরবরাহ কম। বাজারে গিয়ে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ও পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বলেন, এভাবে সার, বীজ বেশি দামে কিনল আবাদের খরচ উঠবে না।
খুচরা সার বিক্রেতা রতন শেখ জানান, দুই মাস ধরে সারের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছিল। এখন সংকটের অজুহাতে আরও বাড়ানো হচ্ছে। পরিবেশকরা বলছেন, সরকারি বরাদ্দের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় বাইরে থেকে বেশি দামে সার আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।
পাবনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি জানান, সারের দাম বাড়ানোর জন্য অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের সমন্বয়ে অভিযান চালিয়ে মেসার্স তাইম এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বিক্রি করছে। তাদের রুখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ বলেন, ঈশ্বরদীতে সারের সংকট থাকার কথা নয়। যারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর