• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩ মিনিট পূর্বে
মো. আশিকুজ্জামান 
বাকৃবি থেকে
প্রকাশিত : ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:০৮ বিকাল
bd24live style=

কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার: বাকৃবি বিশেষজ্ঞ 

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে এটি ব্যাপকভাবে সহায়ক। তাই বাংলাদেশে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।

এছাড়া কৃষিপণ্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষক থেকে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোও স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের অন্তর্ভুক্ত। কৃষকরা সরাসরি বাজারজাত করতে পারলে মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ কমবে এবং তারাও ন্যায্যমূল্য পাবে। এই পদ্ধতি কৃষিপণ্যের উচ্চমূল্যের জন্য দায়ী সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সাহায্য করবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের পরিচালক ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান। 

স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের পরিচালক অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার বলতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং নতুন নতুন কৃষি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষিকাজকে আরও দক্ষ, লাভজনক এবং টেকসই করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট ইমেজিং, ড্রোন, সেন্সর এবং জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটির গুণগত মান, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য সংগ্রহ করা যায়। এর ফলে কৃষকরা সঠিক সময়ে সঠিক সেচ, সার এবং কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেন। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার ব্যবস্থায় ডেটা অ্যানালাইটিক্সের সাহায্যে ফসল উৎপাদনের পূর্বাভাস, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এটি কৃষকদের আরও কার্যকরী পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে। 

স্মার্ট এগ্রিকালচারে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে তিনি জানান, স্মার্ট ট্রাক্টর, রোবটিক হারভেস্টার এবং অটোমেটেড সেচ সিস্টেম ব্যবহার করে কৃষি কাজের খরচ এবং সময় উভয়ই হ্রাস করা সম্ভব। এর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো এবং শ্রমের উপর নির্ভরতা কমানো যায়। ইন্টারনেট অব থিংস ব্যবহার করে স্মার্ট সেন্সর এবং ডিভাইসগুলি মাটির স্বাস্থ্য, আর্দ্রতা এবং অন্যান্য পরিবেশগত তথ্য রিয়েল-টাইমে সংগ্রহ করে যা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেয়। এছাড়া স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, খরা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। উন্নত বীজ এবং কৃষিপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বেশি উৎপাদনশীল এবং জলবায়ু সহিষ্ণু ফসলের চাষ করা সম্ভব হবে যা বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সাহায্যে কৃষকরা প্রতিকূল পরিবেশেও সফলভাবে চাষাবাদ করতে পারবে।

অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান জানান, নিত্যনতুন স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের প্রযুক্তিগুলো কৃষির বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ, কার্যকরী করে তুলছে। পাশাপাশি কৃষির জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে যা ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন এবং টেকসই চাষাবাদকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

দেশে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের সম্ভাবনার পাশাপাশি মাটির সুরক্ষায় এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের ভূমিকা তুলে ধরেন বাকৃবির মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর এবং গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ওয়াকিলুর রহমান।

দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার প্রসঙ্গে কৃষি পেশার সাথে সরাসরি জড়িতদের কর্মসংস্থান হারানোর সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মো. ওয়াকিলুর রহমান বলেন, দেশে বিস্তরভাবে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার বাস্তবায়িত হলে কর্মসংস্থান নষ্ট হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই বরং এটি নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা পালন রাখবে। উদ্যোক্তা তখনই তৈরি হবে যখন তারা কৃষি উৎপাদনের সাথে জড়িত হয়ে লাভবান হতে পারবে। কৃষির সাথে সরাসরি জড়িত অনেকেই অন্যান্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। ফলে দেশে অনাবাদি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার বাস্তবায়িত হলে অনাবাদি সকল জমিই চাষযোগ্য করা যাবে এবং অর্থনৈতিক লাভ নিশ্চিত হবে।

দেশের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে তরুণদের ভূমিকা ও বাণিজ্যিকভাবে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশের তরুণরা গরু-ছাগলের খামার ও মৎস্য চাষে যে পরিমাণে আগ্রহী কৃষির ক্ষেত্রে এর চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। কেননা কৃষি কাজ এখনো ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় নি। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের মাধ্যমে সহজেই কৃষিকে বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব।

‘দেশের কৃষি ব্যবস্থায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতিগুলো পূরণ না করলে ভবিষ্যতে কৃষিকে এগিয়ে নিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের দেশের কৃষি কাজ এখনো প্রকৃতি নির্ভর। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ যেমন গ্রীনহাউজে চাহিদামতো কৃষি উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এজন্য কৃষিকে লাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে স্মার্ট এগ্রিকালচার বিস্তর ভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ওয়াকিলুর রহমান।

অধ্যাপক বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগের ঘাটতি রয়েছে। এটি স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার বাস্তবায়নে একটি বড় বাধা। তাই অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি৷ দেশের অধিকাংশ কৃষক আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত নন। এছাড়া দেশের আবাদি জমিগুলো ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা। এসব খণ্ডিত জমিগুলোতে ড্রোন বা আধুনিক কৃষি যন্ত্র ভালো পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য আবার এতে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। 

স্মার্ট কৃষিতে কীটনাশকের গুরুত্ব উল্লেখ করে মৃত্তিকা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর ইউএনবিকে বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করা স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের একটি অংশ। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে জমিতে কীটপতঙ্গের আক্রমণ, ফসলের বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ইত্যাদি যথাসময়ে নির্ণয় করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা যায়। এছাড়া নির্দিষ্ট জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের যথাযথ পরিমাণ, সময় ও ব্যবহার পদ্ধতি স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের মাধ্যমেই জানা যাবে। স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার এবং কীটনাশকের সমন্বয় করলে দিনশেষে কৃষকরাই লাভবান হবে।  

আগাছানাশক বা কীটনাশক সম্পর্কে ওই অধ্যাপক আরো বলেন, জৈব সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী মাইক্রোবিয়াল পপুলেশনের সংখ্যা বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু জৈব সার প্রয়োগে মাটির উর্বরতা বাড়ে কিন্তু আগাছা নির্মূল করা যায় না যা কৃষি উৎপাদনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কিছু কিছু নন-টার্গেটেড মাইক্রো ও ম্যাক্রো অণুজীব প্রভাবিত হয়। এতে কিছু জীবাণুর সংখ্যা ও কার্যক্রম কমে যায় আবার কিছু অণুজীব প্রভাবিত হয় না। কীটনাশক কখনো মাটির ব্যাকটেরিয়াকে প্রভাবিত করে আবার কখনো মাটির ছত্রাককে প্রভাবিত করে। এটি নির্ভর করে কীটনাশকের রাসায়নিক গঠনের উপর। আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে মাটিতে বসবাসকারী অণুজীব তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না অথবা হলেও সেটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রথম ১৪ থেকে ১৫ দিন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর তার একটি গবেষণার উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, একটি জমিতে নাইট্রিফায়ার্স মাইক্রোবিয়াল পপুলেশনের উপর আগাছানাশক প্রয়োগ করে দেখা যায় পপুলেশনের পরিমাণ প্রথম ১৫ দিন কিছুটা কমে যায়। তবে পরবর্তীতে ওই পপুলেশনের সংখ্যা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। 

মাটির মাইক্রোবিয়াল পপুলেশন ও তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর কীটনাশকের প্রভাব যেমন সয়েল মাইক্রোবায়োলজি ও মাইক্রোবিয়াল ইকোলজির উপর প্রভাব জানতে হলে আরো অনেক গবেষণা প্রয়োজন বলে জানান মৃত্তিকা বিজ্ঞানী জাহাঙ্গীর। 

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com