সিরাজগঞ্জের তাড়াশে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে রাতের আঁধারে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের দু’শ বিঘা জমির চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে রাতভর ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করে দিনে সেটাকে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের ভায়াট গ্রামে দুটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে ভেকু মেশিন দিয়ে শুরু হয় পুকুর দুটি খনন। দিনভর ভেকু মেশিন লুকিয়ে রেখে শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে আবারও শুরু হয়। শনিবার ( ৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে খননকাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত ভায়াট মৌজার জমিগুলো অত্যন্ত উর্বর। এসব জমির অধিকাংশই তিন ফসলী। কিছু কিছু রয়েছে দো-ফসলী। বৃহস্পতিবার রাতে পুকুর ব্যবসায়ী ভায়াট গ্রামের মতিউর ওরফে মতিন ও সান্তান গ্রামের রবিউল পুকুর খনন শুরু করে। ওই গ্রামের কৃষক আশরাফুল, মজিবর, তোতা, আলী, সিদ্দিক ও রশিদসহ অন্তত ২০ জন কৃষককে ভুল বুঝিয়ে অতিরিক্ত টাকার লোভ দেখিয়ে ২০ ও ৪০ বিঘার দুটি পুকুর খনন করছে তারা। রাতভর পুকুর খনন করার পর সকালেই ভেকু মেশিন সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। আবার শুক্রবার রাতে পুকুর খনন শুরু করে তারা।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, এই চরায় কামরুজ্জামান কায়েমের ৩০ বিঘা, আব্দুল মজিদের ১০ বিঘা, বেলাল হোসেনের ১৫ বিঘা, মোজাম্মেলের ৮ বিঘা, আনছার আলীর ১ বিঘা ও ফয়েজ সরকারের দুই বিঘাসহ শতাধিক কৃষকের অন্তত ২শ বিঘা জমি রয়েছে। এখানকার উর্বর ফসলী জমিতে বোরো, আমন ও সরিষার আবাদ হয়। রবিউল ও মতিউর কালভার্টের মুখেই পুকুর দুটি খনন করছেন। ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে এবং এ চরার সকল আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মতিউর ও রবিউল কৃষকদের বছরে বিঘা প্রতি ৫২ হাজার টাকা দিয়ে জমি লিজ নেন। সেই জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করেন এবং পুকুর প্রস্তুত হলে সেটা মৎস্যচাষিদের কাছে লিজ দেন। এভাবেই এই দুই পুকুর ব্যবসায়ী অবাধে ফসলী জমিতে পুকুর খনন করে আসছেন।
মোজাম্মেল নামে এক কৃষক বলেন, আমাদের জমি থেকে বড় বিলের দিকে পানি গড়ানোর রাস্তা বন্ধ করেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে আমার ৮/১০ বিঘা জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফসলের আবাদ না করলে আমরা কি করে চলবো।
এ বিষয়ে জানতে পুকুর ব্যবসায়ী মতিউরের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভায়াটের ওই এলাকার জমি উর্বর ফসলী। বেশিরভাগই তিন ফসলী। কেনা দো-ফসলী। ওই জমিতে পুকুর খননের বিষয়টি আমরা বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেছি।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুইচিং মং মারমা বলেন, আমি গত সপ্তাহে ভায়াটসহ কিছু কিছু জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছি। দিনের বেলায় অভিযান চালিয়ে কাউকে ধরতে পারি নাই। মোবাইল কোর্ট রাতের বেলায় হয় না। তিনি আরও বলেন, ভায়াটসহ বেশ কিছু জায়গায় যেখানে ভেকু মেশিন লাগানো হচ্ছে। জমির মালিক ও কারা কারা সেসব মেশিন লাগাচ্ছে সেই তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি। যদি দিনের বেলায় তাদের না ধরতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ফসলী জমি কেটে পুকুর খননের কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর