ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা-ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে অপপ্রচার করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঊষা রানী রায়ের পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামের ওই নারী ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করেন, গত ৫ আগস্টের পর বোরকা ছাড়া মহিলারা বাইরে বের হতে পারছেনা। গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভিডিওটি ভাইরাল হয়। তবে ওই এলাকায় গিয়ে ঊষা রানী রায়ের পরিবারে সদস্যসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামের সুবাস বাবু রায়ের স্ত্রী ঊষা রানী রায় গত ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার ভারত যান। ভারতীয় এ বি পি আনন্দ টিভিতে ঊষা রানী রায় নামে ওই নারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি বক্তব্য দেন। যা ভারতীয় গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচার করেছে। এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় তোলে একটি বক্তব্য।
ভারতীয় এবিপি আ নন্দ টি ভিতে ঊষা রানী বলেন, তার বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইলে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ দেখেছি। তখন বষয় ১৫বছর। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ যখন হয়েছিল তখন সামনে কেও পড়েনি। কিভাবে কিভাবে হয়ছে,পাকিস্তানীদেরও দেখছিলাম না রাজাকারদের ও দেখছিলাম না। তা এবার দেখছি এই যে জামায়াত বিএনপিরা শিবিররা এসব সামনের পর দিয়ে করতিছে, কথাগুলো তো সমস্ত বলা যাবে না। আবার ফিরে তো বাংলাদেশে যেতে হবে। এখন এই পরিস্থিতির পরে আমরা আছি যা, তা আমাদের মনে হয় না যে আমরা কোথায় যাবো, কি করবো। না আমাদের ওই দেশের থেকে জীবন শেষ হবে,তা আমরা বুঝতে পারিনা। তার কারণ আমরা ভারতে আসিনি। এখানে ভারতে আমাদের জায়গা জমি নাই ঘর বাড়ি নাই। বাড়ি ঘর যা আছে, ছোট একটা ব্যবসা করি ছেলে মেয়ে নিয়ে খায়। তা এখন শিবির বিএনপিরা যা করতিছে না।
এই আমাদের হলো এই মিশিল করার জননী তো ওরা আরো বেশি ক্ষেপে গেছে। সোনার দোকান টুকানো বড়বড় দোকান টুকানো আছে মাগুরা টাগুরা দিয়ে এসব দোকান খুলতে পারতিছেনা। লুটপাট তো করে নিয়ে গেছে। আরো চাঁদা ধরিছে তাদের। মাগুরা এই যে আপনার মাগুরা এক পাড়া থেকে ৫লাখ টাকা দিয়ে সে লুটপাট বন্ধ করিছে। পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। না হলি লুটপাট করে নিয়ে যাবে। অত্যাচার করবে। কি করে থাকবো এডাই তো আমাদের তো আর কোন আশা ভরসা নাই। ভাসমান অবস্থায় আছি। বাড়ির মধ্যে ভাঙচুর হয়নি। ওই বড় বড় শহরে যে সব মন্দির আছে ওসব মন্দিরে সমস্যা হচ্ছে। গ্রামে বাড়ি টারি ডোকেনা। আতঙ্কে আছি আমরা। বাইরে বের হইনি,ওই দিনে যা ঘুরেফিরে বেড়াই। আমাদের নড়াইলের ভিতর ওইখানে মেয়েদের অত্যাচার হচ্ছে না। কথা বলা বারণ। আর ওই মাঝে মধ্যে শুনি বোরকা মুড়িদিয়ে যাঁতি হবে। মেয়েরা বোরকা মুড়ি দিয়ে স্কুলে যাবি এই সব। মেয়েরা ওই যে কি যেনো হিজাব দেয় মুসলমানরা,ওই ভাবে চলতি হবে।
ঊষা রানী রায়ের স্বামী সুবাস বাবু রায় বলেন, আমার স্ত্রী ঊষা রানী রায় নলদী ইউনিয়নের ১৮ বছর ধরে মহিলা মেম্বার ছিলেন। এই জীবনে এত বড় যে একটা ভুল করে ফেলিছে। সে বাধ্যতামূলক ভুল করে ফেলিছে। ওপার (ভারত) নিয়ে তাকে ভারতীয় সাংবাদিকরা ও বিভিন্ন রকম লোকের চাপে পড়ে এ ধরনের কথা বলেছে।
ভারতে অবস্থানরত ঊষা রানী রায় মোবাইলে বলেন, ভারতীয় বর্ডার থেকে ভারতীয় সাংবাদিকরা আমাকে ৪ঘন্টা আটকিয়ে রেখে জোর করে এসব কথা বলিয়েছে। আমি একা ছিলাম, ভয়ে পড়ে কি দে কি বলেছি। আমাকে এসব কথা বলিয়েছে। ভয়ে পড়ে ওখানে এসব কথা বলতি হয়েছিল। আমরা তো বাংলাদেশে ভালো আছি। বাংলাদেশে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। আমি যে এলাকায় বাস করি ওখানে কোন সমস্যা নাই। আমি তো সামাজিক মানুষ। আমি সবার সাথে মিলে চলি। আমি এই দেশে এসে যে এইসব বলতে হবে ভাবতে পারিনি। আমাকে জোর করে বলিয়েছে। আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। কষ্ট পেয়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। ওরা শিখাই দিয়েছে যে কথা গুলো বলছি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর