
রসনাবিলাসীদের খাদ্য তালিকায় মরিচ যেন অপরিহার্য অংশ! আর সেই মরিচ যদি সুগন্ধি ছড়ায় তবে তা হয়ে ওঠে আরও লোভণীয়।
বরগুনার হেউলিবুনিয়া গ্রামের সুনীল নামের এক কৃষক এমনই এক সুগন্ধি জাতের মরিচ আবাদ করেছেন। তার এমন অসাধারণ কৃষি উদ্ভাবন ও পরিশ্রমে সফল হওয়ায় তিনি বরগুনায় পরিচিতি পেয়েছেন মরিচ সুনীল নামে।
সুনীলের চাষ করা এই মরিচের জাতকে ঘৃতকুমারী মরিচ বা বোম্বাই মরিচ হিসেবেই জানে স্থানীয়রা। একদিকে এ মরিচের যেমন রয়েছে দারুণ সুগন্ধি, তেমনি চাহিদাও রয়েছে এলাকাও এলাকার বাইরে।
১৯৮৬ সালে এসএসসি পাস করে উচ্চশিক্ষার বা চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষি কাজেই মনোনিবেশ করেন সুনীল। প্রায় এক দশক আগে পতিত জমিতে সীমিত পরিসরে সুগন্ধি মরিচ চাষ শুরু করেন তিনি। সাফল্যের স্বাদ পেয়ে ধীরে ধীরে বাড়ান চাষের পরিধি। বর্তমানে এক একর জমিতে পাঁচ হাজার মরিচ গাছ নিয়ে তার সুগন্ধি মরিচের বাগান। এই মরিচের অনন্য ঘ্রাণ ও স্বাদ ইতোমধ্যে স্থানীয়দের মন জয় করে নিয়েছে। প্রতিদিন নিপুণ হাতে গাছের পরিচর্যা করেন সুনীল, আর সেই পরিশ্রমের ফলস্বরূপ প্রতিবছর তার গড়ে আয় হয় আট লাখ টাকা। তার এই মরিচ বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে তিনজন শ্রমিকের।
সুনীলের মরিচ বাগান ঘুরে দেখা যায়, নিজের বাগান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বিজ সংগ্রহ করে নার্সারিতে উৎপাদন করছেন চারা। সেই মরিচ চারা আবার বাগানেই রোপণ করা হচ্ছে বিশেষ পদ্ধতিতে। আর বাড়তি চারাগুলো বিক্রি করছেন বাইরে। জানা যায়, শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে খেতে মরিচ চারা রোপণ করা হয়। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা।
এছাড়া সার প্রয়োগ, আগাছা নিড়ানি, পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আশ্বিনে শুরু হয় মরিচের ফলন। এরপর প্রতিদিনই মরিচ তোলেন, আর বিক্রি করেন। বরগুনা থেকে পাইকার এসে খেত থেকেই প্রতিদিন মরিচ নিয়ে যান। এভাবে মরিচের ফলন চলতে থাকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত। সুনীলের খেতে থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেন। প্রতি শতক মরিচ পাইকারি বিক্রি হয় ১০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। গত মৌসুমে সব ব্যয় মিটিয়ে সুনীল ছয় লাখ টাকা মরিচ বিক্রি করে লাভ করেছেন। এবার ফলন আরও ভালো হওয়ায় লাভের পরিমাণ আট লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তাঁর আশা।
বাগান থেকে মরিচ কিনতে আসা মো. আসলাম এক ক্রেতা বলেন, আসলে এই বোম্বাই মরিচের আমি প্রেমে পড়ে গেছি। আমি প্রতি বছর তার বাগান থেকে এক দের হাজার টাকার মরিচ কিনে খাই। আমার আত্মীয়-স্বজনদেরও এই মরিচ এর চারা কিনে উপহার দেই। যে একবার নিয়েছে সেই আমার কাছে এই মরিচ চায়। বরগুনার বাজারের সব জায়গায়ই তার মরিচই চলে। চটপটি, শিঙাড়া, চপ, পেঁয়াজুসহ খাবারে এই মরিচের ব্যবহার হয়।
মরিচ বাগানের শ্রমিক মো. হোসেন বলেন, দীর্ঘ দশ বছর ধরে আমি এই বাগানে কাজ করি। আমার পরিবার এই বাগানের উপরই নির্ভরশীল। মরিচ চাষ করে আল্লাহর রহমতে এই বাগানের মহাজন ভালোই লাভবান হয়। আবার অনেক সময় বন্যা বাদলে সমস্যা হয়। তারপরও মরিচ চাষ লাভজনক। যবি কেউ আমাদের মত মরিচ চাষে আগ্রহী হয় তবে করতে পারে। এটা অনেক লাভজনক ফসল।
কৃষিতে সফলতা নিয়ে সুনীল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৭০-৮০ পার্সেন্ট মানুষ কৃষি কাজ করে। কৃষি কাজ না বাঁচলে দেশ চলতে পারবেনা, দেশ হবে অচল। কৃষিকে সমৃদ্ধ করতেই হবে। আমি ১৯৮৬ সালে এসএসসি পাশ করার পরে আমি কৃষি কাজ নিয়েই পড়ে থাকতাম। নিজে করতাম আবার শ্রমিক দিয়েও করাতাম। এ দিয়েই আমি মোটামুটি সফল হয়েছি।
সামনের দিনেও আমি কৃষি কাজই করতে চাই। এর মাধ্যমে আমার শহরে বাড়ি হয়েছে। আমার ছেলে ইংরেজিতে অনার্স পড়ে। আবার আমার মেয়েকে ভালো পরিবারে বিয়ে দিয়েছি। এই কৃষির আয়ের টাকা দিয়েই।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর